এক রাশেদ খান মেননের ২৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ , দুদকে অনুসন্ধান !

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৭ই অক্টোবর ২০২৪ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন
এক রাশেদ খান মেননের ২৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ , দুদকে অনুসন্ধান !

আওয়ামী সরকারের আমলে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা অনুসন্ধানের জন্য নতুন মাত্রা যোগ করছে।


রাশেদ খান মেনন দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক জগতে সক্রিয়। তিনি ঢাকা-৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সমাজ কল্যাণমন্ত্রী এবং বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, তিনি দেশের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর ছায়া ফেলছে।


গত ২২ আগস্ট, গুলশানের বাসা থেকে মেননকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারির পর তদন্ত শুরু হয়। কয়েক দফা রিমান্ড শেষে তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এই গ্রেপ্তারি রাজনৈতিক মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্ন তুলেছে তার দায়িত্ব পালনকালে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর ওপর।


মেননের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালান, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য এবং অবৈধভাবে বরাদ্দ গ্রহণ করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন। অভিযোগ অনুসারে, তার নামে লন্ডনে ২৫টি, কানাডায় ৫টি, এবং আমেরিকায় ২টি বাড়ির পাশাপাশি ঢাকার গুলশান ও বনানীতে ফ্ল্যাট রয়েছে।


দুদকের অনুসন্ধানে তার অবৈধ সম্পদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

-লন্ডনে ২৫টি বাড়ির আনুমানিক মূল্য ৮ হাজার কোটি টাকা

- কানাডায় ৫টি বাড়ির মূল্য প্রায় ১২০ কোটি টাকা

- ঢাকার গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাটের মূল্য ১৫ কোটি টাকা

- ঢাকার আশুলিয়া ও সাভারে ১৬০ বিঘা জমির মালিকানা


অভিযোগের মধ্যে রয়েছে যে, মেনন কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি হিসেবে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধি অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি অযোগ্য ব্যক্তিদের শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ১৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।


এছাড়া, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে, তিনি অনিয়মের মাধ্যমে ৬ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন।


দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে চলমান দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা সাবেক ক্ষমতাসীন মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। মেননের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার পর কমিশনটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।মেননের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এই বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে এবং তাদের দাবি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।