‘হাড় নেই’ মাহাদির মাথায়, চাপ দিতে বারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: রবিবার ৩১শে অক্টোবর ২০২১ ০৭:৩৪ অপরাহ্ন
‘হাড় নেই’ মাহাদির মাথায়, চাপ দিতে বারণ

মাহাদি জে আকিব (২১)। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন।


হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছে মাথা। যার কারণে ভেঙে গেছে হাড়। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই অবস্থায় অপারেশন করে মস্তিষ্কের কিছু অংশ তার শরীরের মধ্যে সংরক্ষণ রেখেছেন চিকিৎসকরা। মাথায় দেওয়া ব্যান্ডেজে লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’।


চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে শনিবার (৩০ অক্টোবর) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় মাহাদি গুরুতর আহত হন। এরপর তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷


জানা গেছে, শনিবার সকাল ৯টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেইন গেটের পাশে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে মাহাদির ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের এক পক্ষ। এ সময় তারা দেশিয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে তাকে। হামলায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন মাহাদি। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতারা তাকে ফেলে চলে যায়। পরে সহপাঠীরা এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অপারেশন শেষে হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুল কাদের বলেন, ‘মাহাদি জে আকিবের অস্ত্রোপচার হয়েছে। মাথার হাড় ও মস্তিষ্কে ইনজুরি আছে’।


চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় মাহাদিকে ভর্তি করা হয়। তার মাথা থেঁতলানো ছিল, হাড় ভেঙে গেছে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই অবস্থায় অপারেশন করে মাথার কিছু অংশ শরীরের মধ্যে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। আমরা সফল অপারেশন করেছি। আশা করি, মাহাদি সুস্থ হয়ে উঠবে।


এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরকারী ৫৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান বলেন, শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে মারামারি হয়। পরে অধ্যক্ষ উভয়পক্ষ থেকে ৪ জন করে ৮ জনকে তার কক্ষে ডাকেন। আমরা ওখানে যাই। আলাপ চলাকালেই ক্যাম্পাসের বাইরে এক পক্ষের জুনিয়ররা মাহাদির ওপর হামলা চালায়। পরে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মাহাদিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি।


তিনি আরও বলেন, ছুরি ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাতের ফলে মাহাদির মাথায় আঘাত লেগেছে। তাই প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। শনিবার রাতেই তার অপারেশন হয়েছে। রোববার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে চেতনা ফিরেছে। তবে এখনও কথা বলার অবস্থা তৈরি হয়নি।


মাহাদির বাড়ি কুমিল্লায়। তার পিতার নাম মো. ফারুক। ঢাকা নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন বলে জানিয়েছেন সহপাঠীরা। তিনি এমবিবিএস ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।