
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:১০

মানুষের সব চাওয়া বা আবেদনই হতে হবে মহান আল্লাহর দরবারে। এমনকি কারো জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও তা চাইতে হবে আল্লাহর কাছে। এভাবে বলতে হবে- ছিঁড়ে যাওয়া ফিতা মেরামতের ব্যবস্থা করে দাও হে প্রভু! কেননা তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই দান করেন। মানুষ অনেক নেক উদ্দেশ্য ও প্রয়োজন নিয়েই আল্লাহর কাছে আমল ইবাদত ও দোয়া করে। কোথাও যখন কোনো সমাধান নেই তখনও মানুষ আল্লাহর কাছেই ধরণা দেয়। সে কারণে মানুষের চাওয়া বা আবদনগুলোর পরিপূর্ণতার জন্য একনিষ্ঠ হওয়ার বিকল্প নেই। মানুষ এসব আমল ইবাদত ও দোয়া করার ক্ষেত্রেও প্রতারণার আশ্রয় নেয়। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়। আল্লাহ তাআলা তাদের উদ্দেশ্যে বলেন-
‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করতে চায়। অথচ তিনিও তাদের সাথে প্রতারণা করতে সক্ষম। যখন তারা নামাজে দাঁড়ায়, তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায় যে তারা নামাজ আদায় করছে, কিন্তু আল্লাহকে তারা কমই স্মরণ করে।’ (সুরা নেসা : আয়াত ১৪২)
যখন কোনো মানুষ অলসতা করে গুরুত্বহীনভাবে নামাজে দাঁড়ায়, তার এ নামাজ আল্লাহর দরবারে কতটুকু কবুল হবে?
এমনিভাবে মানুষ অলসতার সঙ্গে গুরুত্ব না দিয়ে লোক দেখানো কান্নাকাটি, রোনাজারি করে আমল-ইবাদত ও দোয়া করলে তা কী কবুল হবে? এক্ষত্রে কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনা হচ্ছে-
আমল-ইবাদত ও দোয়া হতে হবে রিয়া বা লৌকিকতামুক্ত। যেখানে লোক দেখানো ইবাদত-বন্দেগির কোনো স্থান নেই। যে ইবাদতে অলসতা আছে, লোক দেখানোর প্রবণতা আছে, সে রিয়া বা লৌকিকতাপূর্ণ ইবাদতে শিরকের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য কাজ করে, আল্লাহ তার (এ কাজের) বদলে (কেয়ামতের দিন) শুনিয়ে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য কাজ করে আল্লাহ তার (কাজের) বদলা তাকে (কেয়ামতের দিন) দেখিয়ে দেবেন।’ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন এসব ব্যক্তিকে মানুষের সামনে অপমানিত করবেন ও কঠোর শাস্তি দেবেন। আবার অনেকে আছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি মানুষের সন্তুষ্টি কিংবা বাহবা পাওয়ার আশাও পোষণ করে তাদের ব্যাপারেও হাদিসে কুদসিতে ধ্বংসের সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘আমি অংশীদারিতা (শিরক) থেকে সব অংশীদারের তুলনায় বেশি মুখাপেক্ষীহীন। যে কেউ কোনো আমল করে এবং তাতে অন্যকে আমার সঙ্গ শরিক করে, আমি তাকে এবং তার আমলকে (উভয়কেই) বর্জন করি।’
সুতরাং মুমিন বান্দাকে সতর্ক থাকতে হবে-
শুধু তা-ই নয়, কোনো বান্দা যদি শুধু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো আমল শুরু করে এবং পরবর্তীতে তার মধ্যে যদি লোক দেখানো ভাব জাগ্রত হয় এবং সে জাগ্রত হওয়া ভাবকে সে ঘৃণা করে, তা থেকে সরে আসতে চেষ্টা করে। তবে তার ওই আমল-ইবাদত ও দোয়া পরিশুদ্ধ হবে। আর যদি লোক দেখানো ভাব জাগ্রত হওয়ার পর তা থেকে ফিরে না আসে বরং এ ভাব মনে জাগ্রত হওয়ার জন্য মনে প্রশান্তি ও আনন্দ পায় তবে ওই ব্যক্তির আমল-ইবাদত ও দোয়া বরবাদ হয়ে যাবে। তাই আল্লাহর সাহায্য লাভে বার বার এ দোয়া করা-
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَ كَفِّرْ عَنَّا سَیِّاٰتِنَا وَ تَوَفَّنَا مَعَ الْاَبْرَارِ، رَبَّنَا وَ اٰتِنَا مَا وَعَدْتَّنَا عَلٰی رُسُلِكَ وَ لَا تُخْزِنَا یَوْمَ الْقِیٰمَةِ ، اِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِیْعَادَ

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّت قَلْبِىْ عَلَى دِيْنِكَ
মনে জাগ্রত হওয়া কুচিন্তার দিকে ধ্যান বা খেয়াল না দিয়ে বেশি বেশি ইসতেগফার পড়া-
আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দাকে আমল-ইবাদত ও দোয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই তার ওপর ভরসা করার বা ধরণা দেয়ার তাওফিক দান করুন। লোক দেখানো ইবাদত কিংবা আমল-ইবাদতে অলসতা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর