প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:০
মানব জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান গুণগুলোর মধ্যে দয়া ও মানবিকতা অন্যতম। ইসলামে দয়া কেবল মানুষের প্রতি নয়, সমস্ত সৃষ্টির প্রতিই প্রদর্শন করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে আমরা দেখতে পাই তিনি দয়া, সহানুভূতি ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ দয়ালু, আর তিনি দয়া প্রদর্শনকারীদের প্রতি দয়া করেন।
সহিহ বুখারির এক হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, যারা পৃথিবীর প্রতি দয়া করবে, আরশের মালিক তাদের প্রতি দয়া করবেন। এ হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, দয়া ও মানবিকতা শুধুমাত্র সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং আখিরাতে আল্লাহর রহমত লাভের একটি মাধ্যম। ফলে একজন মুসলমানের জীবনে দয়া ও মানবিকতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাসূল (সা.) মানুষকে কেবল নিজের স্বার্থে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যদের কল্যাণে কাজ করতে শিখিয়েছেন। হাদিসে তিনি বলেছেন, মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে মানুষের উপকারে আসে। এটি সামাজিক দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে তোলে এবং সমাজে ন্যায় ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়।
দয়া কেবল মানুষের জন্য সীমিত নয়। পশুপাখির প্রতিও দয়া করা ইসলামে ইবাদতের অংশ। সহিহ মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে, এক নারী একটি বিড়ালকে না খাইয়ে মারার জন্য জাহান্নামে যাবে এবং অন্যদিকে এক ব্যক্তি তৃষ্ণার্ত কুকুরকে পানি খাওয়ানোর জন্য জান্নাত লাভ করবে। এই হাদিসগুলো পরিবেশ ও প্রাণীর প্রতি দায়িত্ববোধ বাড়ায়।
রাসূল (সা.)-এর জীবন মানবিকতা ও সহানুভূতির অসংখ্য উদাহরণে ভরপুর। তিনি এমনকি তাঁর শত্রুদের প্রতিও দয়া প্রদর্শন করতেন। তাই মুসলমানদের উচিত তাঁর আদর্শকে অনুসরণ করে সমাজে দয়া, ভালোবাসা ও শান্তি ছড়িয়ে দেওয়া।
বর্তমান সমাজে দেখা যায়, সহিংসতা, বৈষম্য ও অমানবিকতা বেড়ে গেছে। ইসলাম এ ধরনের প্রবণতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে দয়া ও মানবিকতার উপর জোর দিয়েছে। যদি আমরা রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা বাস্তব জীবনে মেনে চলতে পারি, তবে সমাজের অনেক সমস্যা সমাধান হবে।
হাদিসের আলোকে দয়া ও মানবিকতার এই শিক্ষা শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সারাবিশ্বের মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিক। এই শিক্ষা মানুষের মধ্যে ঐক্য, ভালোবাসা এবং একে অপরকে সহায়তা করার মনোভাব গড়ে তোলে।
আজকের দিনে দয়া ও মানবিকতা কেবল নৈতিকতার পরিচয় নয়, বরং ইসলামের প্রকৃত চেতনার প্রতিফলন। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিনের জীবনে রাসূল (সা.)-এর এই হাদিসগুলোকে বাস্তবায়ন করা এবং পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে মানবিকতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করা।