প্রকাশ: ৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:৪২
জুমার দিন মুসলমানদের জন্য সপ্তাহের সবচেয়ে বরকতময় দিন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সূরা জুমা: ৯) এই আয়াত স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে জুমা মুসলমানদের জন্য ইবাদত ও আল্লাহর দিকে ফিরে আসার দিন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সূর্য যেদিন উদিত হয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এই দিনে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেছেন এবং এই দিনেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। এছাড়াও জুমার দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে। এ কারণে জুমার দিন মুসলমানদের জন্য ঈদের মতো মর্যাদাপূর্ণ।
জুমার দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো—খুতবা শোনা। খুতবা শোনার সময় মনোযোগ রাখা, কথা না বলা এবং অন্যকে চুপ করতেও না বলা সুন্নাহ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, খুতবা চলাকালে যদি তুমি তোমার পাশে বসা ভাইকে বলো, ‘চুপ করো’, তবুও সেটা অর্থহীন কথা বলা হিসেবে গণ্য হবে, যা জুমার সওয়াব কমিয়ে দেয়।
জুমার দিনের আরেকটি বিশেষ আমল হলো সূরা কাহফ তিলাওয়াত। একটি হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ পাঠ করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হবে। এটা ঈমান শক্তিশালী করার এবং দুনিয়ার ফিতনা থেকে বাঁচার অন্যতম উপায়।
এদিনে একটি বিশেষ সময় রয়েছে, যেটিকে ‘সাআতুল ইস্তিজাবাহ’ বলা হয়—যখন আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন। অধিকাংশ আলেমের মতে, এই সময়টি আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত। তাই জুমার দিনে বিশেষ দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দুনিয়াবি জীবনে জুমার দিনের শিক্ষা আমাদের শৃঙ্খলিত, পরিচ্ছন্ন ও আধ্যাত্মিকভাবে দৃঢ় হতে শেখায়। জুমার আগের দিন এবং সকালে গুসল করা, সুন্দর পোশাক পরা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, এবং সময়মতো মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা—এসবই সমাজে মুসলমানদের পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলা রক্ষা করে।
আজকের দিনে আমরা অনেকেই কাজের ব্যস্ততা, ব্যবসা বা ব্যক্তিগত কারণে জুমার নামাজ বিলম্বিত করি বা বাদ দেই, যা ইসলামে বড় ধরনের গুনাহ। রাসূলুল্লাহ (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি জুমা অবহেলা করে, আল্লাহ তার অন্তর সিল করে দেন। তাই আমাদের উচিত জুমাকে প্রাধান্য দিয়ে জীবনের নিয়মের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা।
জুমা শুধু একটি সাপ্তাহিক ইবাদত নয়, বরং এটি আমাদের সামাজিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিক জীবনের পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ। এই দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করলে তা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়কেই সুন্দর করবে। তাই আজকের পবিত্র দিনে আসুন, আমরা সবাই অন্তরকে পরিষ্কার করি, গুনাহ থেকে দূরে থাকি এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসি—এটাই জুমার প্রকৃত শিক্ষা।