প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৫৪
জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই মানুষ নানা সংকট, দুঃখ-কষ্ট ও পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। কখনও তা অর্থনৈতিক, কখনও পারিবারিক, আবার কখনও মানসিক। এসব অবস্থায় একজন মুমিনের উচিত নিজের ধৈর্য ধরে আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখা। কুরআনে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।” (সূরা আল-বাকারা: ১৫৩) এ আয়াতই প্রমাণ করে যে কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্যই মুমিনের প্রকৃত অস্ত্র।
মানুষ সাধারণত বিপদের সময় উদ্বিগ্ন ও হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু একজন মুমিনের জন্য হতাশা কোনো বিকল্প নয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “বিপদের সময় যে ধৈর্য ধরে, সে মহান পুরস্কার লাভ করে।” (বুখারি) অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর বান্দাকে কখনো বৃথা কষ্ট দেন না, বরং সেই কষ্টের মধ্যেই রয়েছে পরিক্ষা ও পুরস্কারের সম্ভাবনা।
ধৈর্য মানে কেবল কষ্ট সহ্য করা নয়, বরং তা হলো আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা। কেউ যদি মনে মনে আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়, তাহলে তা ধৈর্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রকৃত ধৈর্য হচ্ছে আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকা এবং তাতে কল্যাণ আছে—এ বিশ্বাস রাখা।
কুরআনে আরও বলা হয়েছে, “যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা আত-তালাক: ৩) অর্থাৎ মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন, আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কিছুই ঘটে না। তাই বিপদের সময় শুধু নিজের প্রচেষ্টার উপর নয়, আল্লাহর উপর নির্ভর করাই মুমিনের কর্তব্য।
ধৈর্য মানুষকে মানসিকভাবে শক্ত করে এবং জীবনের প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করার সাহস জোগায়। একজন ধৈর্যশীল মানুষ কখনও অন্যের প্রতি ক্ষোভ বা ঘৃণার মনোভাব পোষণ করে না, বরং ক্ষমা ও সহনশীলতার মাধ্যমে সম্পর্ক রক্ষা করে। এভাবে সমাজে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা পায়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবনে বহু দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন, কিন্তু কখনও অভিযোগ করেননি। তিনি ধৈর্য ও সহনশীলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাই মুসলমানদের উচিত তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করা।
আজকের দুনিয়ায় নানা অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে মানুষ সহজেই হতাশায় ভোগে। কিন্তু মুমিনের জন্য হতাশা হারাম, কারণ আল্লাহর রহমত সীমাহীন। তিনি বলেছেন, “আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।” (সূরা ইউসুফ: ৮৭) তাই যত বড়ই বিপদ আসুক, আল্লাহর উপর ভরসা রাখাই সত্যিকার ঈমানের নিদর্শন।
সবশেষে বলা যায়, ধৈর্য ও আল্লাহর উপর ভরসা একে অপরের পরিপূরক। যে মানুষ ধৈর্য ধরে এবং আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখে, আল্লাহ তাকে এমনভাবে সাহায্য করেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে মুমিনের এই বিশ্বাসই তার সবচেয়ে বড় শক্তি।