সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মো. রেজা-উন-নবী বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের পূর্বে রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিজস্বভাবে তাদের দায়িত্ব প্রতিপালনের জন্য তাদের যে স্বাধীনতা সেটাকে আমরা নিশ্চিত করতে পারি নাই। আজকে সেজন্য বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে এমন কোনো বিভাগ নাই যে বিভাগ বলতে গেলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়নাই। তাহলে আজকে সে জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বের হয়ে এসে আজকে আমাদের আত্মমর্যাদাশীল হতে হবে। আপনি যদি ক্রিতদাসের মতো আচরণ করেন আপনি কোন দিন আত্মমর্যাদসম্পন্ন মানুষ হতে পারবেন না। আপনি যদি সবসময় অন্যায়কারী বা নেতা যেই হোকনা কেনো সে দুর্নীতি করবে, অন্যায় করবে আপনি তাও তার পেছনে হাঁটবেন আবার আত্মমর্যাদার কথা বলবেন এটা কখনো হবে না। সে জন্য আমি মনে করি এই জায়গুলোতে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে, নতুন করে চিন্তা করতে হবে নতুন দেশ বিনির্মিাণের জন্য কাজ করতে হবে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও সুধীজনের নিয়ে বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, আপনি প্রতিবাদ করবেন আপনার বিরুদ্ধে মামলা হবে, আপনি বিপ্লবী হবেন আপনার ঠিকানা হবে জেলখানা, আপনি নেতৃত্ব দিবেন আপনি গুম হবেন অথবা আয়নাঘর বা জীবন্ত কবর দেওয়া হবে আপনাকে। ভুলে গেছেন? এক বছর আগের কথা ভুলে গেছেন? প্রতিবাদহীনতার এই দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি যদি ভুলে যান; আমরা ভুলে যাওয়া জাতি, আমরা সব ভুলে যাই, আমরা ভুলে যাই এটা আমাদের বড় একটা দুর্বলতা, সব কিছু ভুলে যাওয়া যাবে না। এ ধরণের সংস্কৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটা জায়গায় জবাবদিহিতা চাই, আমরা প্রত্যেকটা বিনিয়োগ যেটা হয়েছে অথবা প্রত্যেকটা বাজেট, প্রত্যেকটা অর্থের ব্যবহার যথার্থ হয়েছে কিনা সেটি জনগণের পক্ষ থেকে জবাব চাই। সেই ধরণের জবাবদিহীতার একটি রাষ্ট্র আমাদের সৃষ্টি করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে করে ভবিষ্যতে একটি ভালো বাংলাদেশ তৈরি করা যায়, সেটি যদি সবাই মিলে আমরা করতে পারি তাহলে সকলের জন্য বাসযোগ্য একটি বাংলাদেশ হবে। আর যদি করতে না পারি তাহলে আবারো সেই অতলগহŸরে চলে যেতে হবে।
খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, একটা ভুল পথে চলে কখনো শুদ্ধ জায়গা পৌছানো সম্ভব নয়। অন্ধকার কখনো অন্ধকার সৃষ্টি করা ছাড়া কিছু করতে পারে না। অন্ধকারকে রিমুভ করতে হলে আলো দরকার। মিথ্যা কখনো মিথ্যাকে দূর করতে পারে না। মিথ্যাকে দূর করতে হলে সত্য লাগবে। অন্যায়কে দূর করতে হলে ন্যায় লাগবে। আজকে সমাজে যা কিছু আছে সব আবর্জনাকে পরিস্কার করার জন্য আমাদের যা করা দরকার সব করতে হবে, অটোমেটিক কিছুই হবে না।
শ্রীমঙ্গলে উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও সুধীজনের সাথে মতবিনিময় করেছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবী। বুধবার বিকেল বিকেলে উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স হলে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মোঃ ইসলাম উদ্দিন। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন, শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) আমিনুল ইসলাম, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউসুফ হোসেন খান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, এনজিও প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুধী সমাজের প্রতিনিধিরা।
এর আগে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন, উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন, বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মো. রেজা-উন-নবী।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসলাম উদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বুধবার সফরকালে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত নানা কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহন করেছেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মো. রেজা-উন-নবী।
বুধবার সকালে বিটিআরআই পরিদর্শন শেষে সমতল ভূমিতে বসবাসরত অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প এর আওতায় ২০৭ জন উপকারভোগীদের মাঝে ছাগল, খাদ্য, ম্যাট এবং ঘর তৈরীর উপকরণ সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার। এছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিদর্শন, শহরতলীর উত্তরসুর কুলচন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দর্শন, পৌরসভার কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অফিস ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য, শ্রীমঙ্গল পৌরসভা মিলনায়তন কাম গ্রন্থাগার এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন, মোহাজিরাবাদ এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য, জেলা পরিষদ মৌলভীবাজার কর্তৃক বাস্তবায়িত একটি উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন, প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ৬৮৫ জন উপকারভোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও রাসায়নিক সার সহায়তা কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি অফিসসমূহের দপ্তর প্রধানগণের জন্য ওয়েব পোর্টাল ও ডি-নথি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে প্রধান অতিথির বক্তব্য, উপজেলা ভূমি অফিস দর্শন এবং নামঞ্জুরকৃত নামজারি মামলায় নথি পর্যালোচনা এবং সর্বশেষ ইউনিয়ন ভূমি অফিস শ্রীমঙ্গল সদর পরিদর্শন করেন।
এছাড়া শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বাস্তবায়নে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা মিলনায়তন কাম গ্রন্থাগার এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এর আনুষ্ঠানিক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মো. রেজা-উন-নবী। এসময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক মো. ইসলাম উদ্দিনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার নিবাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার বাস্তবায়নে ‘শ্রীমঙ্গল পৌরসভা মিলনায়তন কাম গ্রন্থাগার’ এর দুই তলা ভবণ এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। ৯৯ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫৫৮ টাকা ব্যয়ে এখানে নিচতলায় আধুনিক ও মানসম্মত লাইব্রেরির পাশাপাশি দ্বিতীয় তলায় কফি কর্ণার, বয়স্কদের বিশ্রামাগার, শিশু-কিশোর পাঠকদের বই পড়াসহ সবধরণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এখন প্রথম তলার কাজ সম্পন্ন করা হবে, পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় তলা শেষ করা হবে। তিনি জানান, লাইব্রেরি মোট তিন হাজার ৯১৯ ফুট স্কয়ার বিশিষ্ট হবে। এর মধ্যে নিচতলা দুই হাজার ৮২৫ ফুট স্কয়ার এবং দ্বিতীয় তলা এক হাজার ৮৪ ফুট স্কয়ার বিশিষ্ট।