প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ৯:২৪

জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মানুষ নানা রকম বিপদ, দুঃখ ও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়। কারো জীবনে আসে আর্থিক কষ্ট, কারো জীবনে আসে শারীরিক অসুস্থতা বা পারিবারিক সংকট। এসব অবস্থায় মানুষ প্রায়ই হতাশ হয়ে পড়ে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মুমিনের উচিত প্রতিটি বিপদের সময় আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা। আল্লাহ বলেন, “যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।” (সূরা আত-তালাক: ৩)। এই আয়াত আমাদের শেখায় যে, প্রকৃত ভরসা মানুষ বা বস্তু নয়, একমাত্র আল্লাহর প্রতি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর জীবনের কঠিন সময়গুলোতেও সর্বদা আল্লাহর উপর নির্ভর করতেন। তায়েফে নির্যাতিত হওয়ার পর, বদর ও উহুদের যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা হিজরতের সময়—প্রতিটি সংকটে তিনি আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। এই আখলাক আমাদের শেখায় যে ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল (ভরসা) মুমিনের শক্তির মূল ভিত্তি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা বাকারা: ১৫৩)।
আজকের সমাজে মানুষ সামান্য সমস্যাতেই হতাশ হয়ে পড়ে। চাকরি হারালে, ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, বা পারিবারিক ঝামেলায় পড়লে অনেকেই মনে করে সব শেষ। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এসবই আল্লাহর পরীক্ষা। মহান আল্লাহ বলেন, “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতি দ্বারা।” (সূরা বাকারা: ১৫৫)। এই পরীক্ষার মধ্য দিয়েই আল্লাহ বান্দাকে যাচাই করেন কে তাঁর প্রতি ধৈর্য ও বিশ্বাস রাখে।
ধৈর্য মানে কেবল চুপ থাকা নয়, বরং অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে আল্লাহই উত্তম ব্যবস্থা করবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা রাখে, আল্লাহ তাকে এমন জায়গা থেকে রিযিক দেন যা সে কল্পনাও করে না।” (তিরমিজি)। এই হাদীস প্রতিটি মুসলমানের মনে আশার আলো জ্বালায়।
সংকটের সময় দোয়া করা, ইস্তেগফার করা, নামাজে মনোযোগী হওয়া এবং কুরআন তিলাওয়াত করা মুমিনের জন্য বিশেষ প্রশান্তি আনে। আল্লাহর স্মরণে হৃদয় প্রশান্ত হয়—এ কথা কুরআনে সরাসরি বলা হয়েছে। সুতরাং দুঃসময়ে আল্লাহর স্মরণই মানসিক শান্তির শ্রেষ্ঠ পথ।

ইসলামী ইতিহাসে নবী আইয়ুব (আ.) ছিলেন ধৈর্য ও ভরসার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। অসুস্থতা, সম্পদহানি ও সন্তানহানির পরও তিনি কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হননি। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাঁকে আগের চেয়ে দ্বিগুণ দান করে সম্মানিত করেছেন। এটি আমাদের শেখায়—ধৈর্যই সাফল্যের চাবিকাঠি।
আধুনিক যুগে সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপের মধ্যেও একজন মুসলমানের উচিত আল্লাহর উপর আস্থা রাখা এবং হতাশ না হওয়া। কারণ হতাশা কেবল শয়তানের কৌশল, যা মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
অতএব, জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় আমরা যেন ধৈর্য ধারণ করি, আল্লাহর উপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখি এবং তাঁর রহমতের আশায় থাকি। কারণ আল্লাহর পরিকল্পনাই সর্বোত্তম পরিকল্পনা।