প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৩৩

বর্তমান দুনিয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য মানুষের জীবনে অপরিহার্য। প্রতিদিনই বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, লাভের লোভ মানুষকে নানা ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসলাম ব্যবসায় সততা ও ন্যায়পরায়ণতাকে ঈমানের অংশ হিসেবে দেখেছে। একজন মুসলমান শুধু নামাজে নয়, লেনদেনের ক্ষেত্রেও আল্লাহভীতি ধারণ করে চলবে—এটাই প্রকৃত ধর্মীয়তা।
কুরআনে আল্লাহ বলেন, মাপে ও ওজনে কম দিও না (সূরা হুদ, আয়াত ৮৪)। এই আয়াত আমাদের সততার মূল শিক্ষা দেয়। ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতারণা শুধু মানুষের প্রতি অন্যায় নয়, বরং আল্লাহর আদেশ অমান্য করা। আজ দেখা যায়, দামে কারচুপি, ভেজাল দেওয়া, ওজনে কম দেওয়া অনেকেই স্বাভাবিক কাজ মনে করে। অথচ ইসলামে এগুলো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিনে নবী, শহীদ ও সৎ মানুষের সঙ্গে থাকবে।” (তিরমিজি)। এই হাদিস আমাদের বুঝিয়ে দেয়, ব্যবসায় সততা শুধু দুনিয়ার লাভ নয়, আখিরাতের সম্মানের পথও। তাই সত্যিকার মুসলমান কখনোই মুনাফার নামে প্রতারণা করবে না।
বর্তমান সমাজে অনেক ব্যবসায়ী বাহ্যিকভাবে ধর্মপরায়ণ হলেও ব্যবসায়িক লেনদেনে দ্বিমুখী আচরণ করে। নামাজ পড়ে, দানও করে, কিন্তু বাজারে ওজনে কম দেয় বা মানুষকে ঠকায়। ইসলাম এই দ্বিচারিতা গ্রহণ করে না। ধর্ম শুধু মসজিদের ভেতর নয়, জীবনের প্রতিটি কাজে প্রতিফলিত হওয়াই প্রকৃত ইবাদত।
আজকের যুগে ভোক্তার অধিকার রক্ষা, স্বচ্ছ লেনদেন ও ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা শুধু আইনি দায়িত্ব নয়, ইসলামী দায়িত্বও। মুসলমানরা যদি এই নীতিগুলো মেনে চলে, তবে সমাজে আস্থা, শান্তি ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হবে। ব্যবসায় সততা অর্থনীতি শক্তিশালী করার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে বিশ্বাস গড়ে তোলে।

পরিবারে ও সমাজে আমাদের সন্তানদেরও শেখানো উচিত—সফলতা প্রতারণায় নয়, বরং পরিশ্রম ও সৎ উপার্জনে। বাড়িতে যখন বাচ্চারা দেখে বাবা সৎ উপায়ে উপার্জন করছেন, তখন তারাও সেই মানসিকতা নিয়ে বড় হয়। এটি একটি প্রজন্মকে বদলে দিতে পারে।
ইসলামের শিক্ষায় ব্যবসায় শুধু লাভ নয়, বরং মানুষের কল্যাণ, ন্যায়বিচার ও সামাজিক দায়িত্ববোধ রয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয় রেখে ব্যবসা করে, তার রুজিতে বরকত হয়, মন শান্ত থাকে, আর মানুষের ভালোবাসা পায়। তাই বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী সেই যে সততার পথ বেছে নেয়, যদিও তা সাময়িকভাবে কম লাভের মনে হয়।
আজকের দিনে মুসলমানদের দায়িত্ব ব্যবসায় ইসলামী নীতি মেনে চলা। আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত—লোভ নয়, বরং সততা দিয়ে রুজি হাসিল করা। দুনিয়ার লাভ ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু সততার বিনিময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি স্থায়ী।