প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৫৮
জীবনের প্রতিটি বাঁকে মানুষ খোঁজে শান্তি, স্বস্তি ও তৃপ্তি। কিন্তু দুনিয়ার চাকচিক্যে সে শান্তি কোথাও পাওয়া যায় না। আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, লোভ ও প্রতিযোগিতা মানুষকে ক্লান্ত করে তুলছে প্রতিদিন। অথচ কুরআন বলছে, “জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।” (সূরা রা’দ, আয়াত ২৮)। এই আয়াতের মধ্যেই রয়েছে মানুষের মনের সকল অশান্তির নিরাময়।
আজকের সমাজে আমরা দেখি—অর্থ, পদমর্যাদা, খ্যাতি, সম্পর্ক—সবকিছু অর্জনের পরও মানুষ উদ্বিগ্ন। কারণ, তার আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে আল্লাহর স্মৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তার হৃদয় কখনও মরেনা।” (তিরমিজি)। এই হাদীস মানুষকে ডাকে এমন এক শান্তির দিকে, যা দুনিয়ার কোনো অর্জন দিতে পারে না।
জুমার দিন হচ্ছে সেই বরকতময় সময়, যখন আল্লাহ বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, আল্লাহ তা কবুল করেন।” (বুখারি ও মুসলিম)। তাই আজকের এই দিনে অন্তত এক মুহূর্ত থেমে নিজের আত্মাকে জিজ্ঞেস করা উচিত—আমি কি আল্লাহর পথে ফিরে এসেছি?
বর্তমান সমাজে মানুষ যতই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে, ততই আল্লাহভীতি ও নৈতিকতা হারাচ্ছে। অথচ আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহকে ভয় কর; আল্লাহ তোমাদের জ্ঞান দান করবেন।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৮২)। অর্থাৎ প্রকৃত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা আসে তাকওয়া থেকে, প্রযুক্তি থেকে নয়।
একজন মুমিনের হৃদয় সবসময় নরম থাকে আল্লাহর ভয়ে, এবং সে অন্যদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতিশীল। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে মানুষদের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না।” (বুখারি)। এই হাদীস সমাজে মানবিকতার শিক্ষা দেয়।
দুনিয়ার ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি পেতে হলে অন্তরের জানালা খুলতে হবে আল্লাহর স্মরণের আলোয়। নামাজ, দোয়া, কুরআন তেলাওয়াত—এগুলো শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, আত্মার প্রশান্তির উৎস। প্রতিটি সেজদা যেন হয় আত্মসমর্পণের নিদর্শন, প্রতিটি দোয়া যেন হয় তওবার আহ্বান।
জুমার দিনটি হতে পারে আমাদের জীবনের মোড় ঘোরানোর দিন। এই দিনেই আল্লাহর দরবারে ফিরে যাওয়া যায় খাঁটি মন নিয়ে। জীবনের ভুলগুলো স্বীকার করে নতুন করে শুরু করার শ্রেষ্ঠ সময় আজই।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে তাঁর পথে ফিরে আসার তাওফিক দেন, আমাদের অন্তরগুলোকে শান্তি ও প্রশান্তিতে ভরে দেন—এই দোয়া থাকলো জুমার পবিত্র এই দিনে।