গাজায় অবশেষে ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টায় এই যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। যদিও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তবে হামাসের পক্ষ থেকে মুক্তি পেতে যাওয়া জিম্মিদের তালিকা দেরিতে প্রকাশ করায় প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিন ইসরায়েলি নারীর মুক্তির তালিকা পাওয়ার পরই এই চুক্তি কার্যকর করা হয়। হামাসও জানিয়েছে যে, কারিগরি সমস্যার কারণে তারা দেরিতে তালিকা প্রকাশ করেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম তিন নারী হলেন রোমি গোনেন, এমিলি দামানি এবং দোরোন স্টেনব্রিচার।
গতকাল শনিবার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা এই যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদন করে। চুক্তিটি তিনটি ধাপে কার্যকর হবে এবং প্রথম ধাপে ৪২ দিনের মধ্যে বিভিন্ন বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করার কথা রয়েছে। এই ধাপে তিন ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে ৭৩৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পাবে। মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের অধিকাংশই নারী ও শিশু বলে জানা গেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এই চুক্তির আওতায় প্রথম পর্যায়ে মোট ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাবে। ইসরায়েল এবং হামাস উভয় পক্ষই এই চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সমাপ্তি ঘটাতে চায়।
গাজায় যুদ্ধবিরতির এই চুক্তি কাতার, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিসরের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত হয়েছে। মধ্যস্থতাকারীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধবিরতি গাজা অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই চুক্তি দীর্ঘমেয়াদে শান্তি নিশ্চিত করবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।
১৫ মাসের এই সংঘাতে গাজায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। অন্যদিকে, ইসরায়েলি পক্ষেও বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই যুদ্ধবিরতির ফলে উভয় পক্ষের বন্দি ও জিম্মিদের মুক্তির মাধ্যমে সহিংসতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় ইসরায়েল এবং হামাস উভয়ের পক্ষ থেকে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অঞ্চলে দীর্ঘদিনের বিরোধ এবং সহিংসতার মূল কারণগুলো সমাধান ছাড়া স্থায়ী শান্তি আসা কঠিন।
গাজার এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল ইতিবাচক মন্তব্য করছে। তবে যুদ্ধবিরতির শর্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হলে ভবিষ্যতে সংঘাতের পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি রয়ে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।