কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সুরার বিশেষ ৫ ফজিলত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ৩০শে অক্টোবর ২০২১ ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সুরার বিশেষ ৫ ফজিলত

সুরাতুল ফাতিহা। সাবআ মাসানি খ্যাত মক্কায় অবতীর্ণ সুরাটি কোরআনুল কারিমের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাপূর্ণ সুরা। যে সুরাটির সঙ্গে মুমিন মুসলমান মাত্রই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। সাধারণত যে বিষয় সম্পর্কে মানুষ সবচেয়ে বেশি পরিচিত থাকে; তা নিয়ে মানুষের আগ্রহ স্বাভাবিকভাবে খুবই কম থাকে। সুরা ফাতিহার ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনা ঘটেছে। অথচ সুরাতুল ফাতিহার মর্যাদা অনেক বেশি।


সুরাটির মর্যাদা বেশি হলেও সব মানুষই এটিকে সাধারণ একটি সুরা হিসেবে জানে। কিন্তু নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা ফাতেহা সম্পর্কে কী বলেছেন?সুরা ফাতেহা কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ সুরা। একসঙ্গে নাজিল হওয়া ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সরা এটি। এ সুরা প্রসঙ্গে হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-


১. সব আসমানি গ্রন্থের শ্রেষ্ঠ সুরা


‘শুধু কোরআনুল কারিমে তো নয়-ই; বরং কোরআন ছাড়া যতো আসমানি কিতাব দুনিয়ায় নাজিল হয়েছে তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল; কোনো গ্রন্থেই মর্যাদার দিক থেকে সুরা ফাতিহার সমকক্ষ কোনো সুরা বা কোনো অংশ নাজিল হয়নি।’ (মুসনাদে আহমাদ)


হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সুরা ফাতেহা শেখানোর সময় বলেছিলেন, কোরআনুল কারিমে যত সুরা আছে তার মধ্যে মর্যাদার দিক থেকে সবচেয়ে আজম, সবচেয়ে মহত, সবচেয়ে মহান ও শ্রেষ্ঠতম সুরা।’ (বুখারি)


২. নামাজের জন্য নির্ধারিত সুরা


ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের দ্বিতয়ি স্তম্ভ নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়তে হয়। চাই তা ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত কিংবা নপল নামাজ হোক। এখানে চিন্তার বিষয় কত গুরুত্বপূর্ণ হলে কোরআনুল কারিমে ছোট-বড় ১১৪টি সুরা থাকতে নামাজে সুরা ফাতিহা পড়াকে আবশ্যক করে দিয়েছেন। এ থেকেও বুঝা যায়, সুরা ফাতিহার মর্যাদা কতবেশি!


৩. উম্মুল কোরআন


সুরা ফাতিহার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এটি উম্মুল কোরআন। অর্থাৎ কোরআনের মূল। কারণ এ সুরায় মহান আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়ত তথা তিনি যে সব কিছুর রব; সেই স্বীকারাক্তি আছে এ সুরায়। পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপের বিষয় রয়েছে। আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের স্বীকৃতি রয়েছে। মানুষকে শিরকমুক্ত ইবাদতে একনিষ্ঠ হওয়ার ঘোষণা আছে এ সুরায়। আবার এ সুরায় একচ্ছত্রভাবে আল্লাহর কাছে আত্মসর্ম্পনের বিষয়ও রয়েছে। আল্লাহর কাছে চাওয়া-পাওয়ার সব নিবেদনই রয়েছে এ সুরায়। সুতরাং কোরআনে মৌলিক সব বিষয়গুলো এ সুরায় থাকার কারণেই সুরাটিকে উম্মুল কোরআন বলা হয়েছে।


৪.  সুরাটি আলোর সুসংবাদ


হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিলেন, আমি আপনাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দুইটি নুর তথা আলোর সুসংবাদ দিচ্ছি। তার একটি হলো- সুরাতুল ফাতেহা। আর দ্বিতীয় হলো- সুরা বাকারার শেষের আয়াতসমূহ।’ (মুসলিম) অর্থাৎ এগুলোর মধ্যে মহান আল্লাহ তাআলা এমন নুর তথা আলো রেখেছেন; যা দ্বারা মুমিন মুসলমান দুনিয়া ও পরকালে পথ চলতে সক্ষম।


৫. সুরাতুস শেফা


সুরাতুল ফাতেহার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি সুরাতুস শেফা তথা আরোগ্য লাভের সুরা। যে কোনো রোগ; যে কোনো বালাই; যে কোনো কঠিন পীড়া থেকে মুক্তি পেতে সুরা ফাতিহার আমলের বিকল্প নেই। রোগ যত কঠিন এবং জটিলই হোক না কেন; সুরা ফাতিহা তেলাওয়াত করে তা পানি, তেল বা কোনো খাবারে দম করে তা আহার করা হয় তবে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে কঠিন রোগ-ব্যধি থেকে মুক্তি দান করেন। কিংবা সুরা ফাতিহা পড়ে মানুষের শরীরের যে অংশে পীড়া বা অসুবিধা সে অংশে ফু কিংবা হাত দ্বারা মাসেহ করে দেওয়া হয় তবে আল্লাহর ইচ্ছায়; আল্লাহর হুকুমে তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।


সর্বোপরি কথা


সুরা ফাতিহার এ আমলে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ সাহাবায়ে কেরাম এবং তৎপরবর্তী মনিষীগণ নানাবিধ অসুস্থতা ও রোগ-ব্যধি থেকে মুক্তি লাভ করেছেন। সুরা ফাতিহার আমলটি সৎকর্মশীল বান্দাদের মাঝে একটি পরীক্ষিত আমল।


সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, বিভিন্ন সাধারণ, জটিল ও কঠিন রোগ-ব্যাধিতে আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি সুরাতুল ফাতিহার আমল করার মাধ্যমে আরোগ্য লাভের চেষ্টা করা।


অর্থ ও উচ্চারণসহ সুরা ফাতিহা




بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيمِ


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম


শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।


الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ


আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন


যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। যিনি সব সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।


الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ


আর রাহমানির রাহিম


যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।


مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ


মারিকি ইয়াওমিদ্দিন


যিনি বিচার দিনের মালিক।


إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ


ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন


আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য চাই।


اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ


ইহদিনাস সিরাত্বাল মুসতাক্বিম


আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,


صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ


সিরাত্বাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়া লাদ্দাল্লিন।সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা ফাতিহার কার্যকরী পাঁচটি মর্যাদার বিষয়ে সজাগ থাকার ও যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।