পরিবেশ সংরক্ষণে বিশ্বজুড়ে আজ সম্মিলিত আওয়াজ উঠেছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে এ বিষয়ে নানা উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। তারপরও বিশ্বে আজ নানা ভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ নিয়ে বিশ্ব আজ উদ্বিগ্ন। এই দূষণের ফলেই বিশ্বময় একের পর এক প্রাকৃতিক বিপদাপদ আঘাত হানছে; বিশ্ব পড়েছে ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে।
বাতাস ও পানি, মাটি ও গাছপালা এগুলো মহান স্রষ্টার অপার নেয়ামত। এ নেয়ামত থেকে কেউ বঞ্চিত নয়। আস্তিক-নাস্তিক সবাই এগুলো থেকে উপকৃত হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘আর আল্লাহ আকাশ থেকে পানি অবতীর্ণ করেছেন এবং পৃথিবীকে মৃত্যুর পর এর মাধ্যমে জীবিত করে তুলেছেন। নিশ্চয় এতে সেই সব লোকের জন্য রয়েছে এক বড় নিদর্শন যারা কথা শুনে।’ (সুরা নাহল: আয়াত ৬৫) তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি অবতীর্ণ করেছেন। এতে রয়েছে সুপেয় পানি। এ থেকেই সেসব গাছপালা উৎপন্ন হয় যেগুলোতে তোমরা গবাদি পশু চরিয়ে থাক।’ (সুরা নাহল: আয়াত: ১০)
‘তিনিই পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদরূপে বানিয়েছেন এবং মেঘ থেকে পানি অবতীর্ণ করেছেন। এরপর তা দিয়ে তিনি তোমাদের জন্য রিজিকরূপে নানা প্রকারের ফলফলাদি উৎপন্ন করেছেন। অতএব তোমরা জেনেশুনে কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করাবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২) ‘আর তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। এরপর আমি এ দিয়ে সব ধরনের উদ্ভিদ উদ্গত করেছি। এরপর আমি তা থেকে সবুজ তরুলতা উৎপন্ন করেছি, যা থেকে সুবিন্যাস্ত শস্যদানা উৎপন্ন করে থাকি।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ৯৯)
পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা ও জীব জগতের অস্তিত্ব রক্ষায় আল্লাহ তাআলা বৃষ্টিবর্ষণ করেন। আমরা জানি, গাছ মানুষ ও পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু। সবুজ গাছপালার ওপরই নির্ভর করে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর টিকে থাকা। পরিবেশ সংরক্ষণের মূর্তপ্রতীক ছিলেন মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। বিশেষ করে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন দুনিয়ার ইতিহাসে তা বিরল।
আজ বিশ্ববাসী যদি মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুযায়ী পরিবেশ রক্ষার দিকে দৃষ্টি দিত তাহলে হয়তো এত বিপদাপদ হানা দিত না। আসলে আমাদের অদূরদর্শিতা ও অমানবিক আচরণে প্রকৃতিতে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে তা তাবৎ বিশ্বের মানুষের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। ফলে বায়ুতে বেড়েছে দূষণ, বেড়েছে তাপমাত্রা, বৃদ্ধি পেয়েছে রোগ-শোক এবং প্রাকৃতিক নানান দুর্যোগ। এসব বিপর্যয় থেকে বাঁচার জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটি, গবেষক ও বিজ্ঞানীরা বনরক্ষা এবং বৃক্ষরোপণকে অন্যতম উপায় বলে মত দিয়েছেন। অথচ মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃক্ষ ও বনরক্ষার তাগিদ দিয়েছেন সেই চৌদ্দশ বছর আগে।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবেশ রক্ষায় গাছকে কতটা ভালোবাসতেন দেখুন- তিনি বলেন ‘যদি তুমি বুঝতেও পারো যে, কিয়ামত (মহা ধ্বংস) আসছে এবং তোমার হাতে একটি গাছের চারা থাকে, তবুও তুমি চারাটা লাগিয়ে দাও।’ (মুনসাদে আহমদ) মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গাছ লাগানো মুসলিমদের জন্য সাদকাস্বরূপ।’ (বুখারি, মুসলিম, দারেমী)
এই হাদিসের প্রেক্ষিতে অনেক সাহাবায়ে কেরামই বলতেন, ‘যদি কেউ গাছ লাগিয়ে মারাও যায় কিন্তু গাছ যদি বেঁচে থাকে এবং তার ফল ও ছায়া মানুষ ও পশু-পাখি যত দিন ভোগ করবে, ততদিন মৃত ব্যক্তি নেকি পেতে থাকবে।’ (মুনসাদে আহমদ) অন্যত্রে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গাছ লাগায় এবং গাছের যত্ন করে তাকে বড় করে, সেই গাছের একটি ফলের হিসাবে তার আমল নামায় একটি করে নেকি লেখা হয়।’ (মুনসাদে আহমদ)
মানুষের উপকারার্থেই মহান আল্লাহ প্রকৃতি সৃজন করেছেন। আমরা চারপাশে যা কিছু দেখি তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। সুনীল আকাশ, জীবন বাঁচানোর জন্য অতি প্রয়োজনীয় বাতাস ও পানি, মাটি ও গাছপালা এবং সম্প্রসারিত বিশাল দিগন্ত সব মিলেই আমাদের পরিবেশ। আমাদের সবার দায়িত্ব যার যার অবস্থানে থেকে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা পালন করা।মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে পরিবেশ রক্ষায় ইসলামি যে দিকনির্দেশনা রয়েছে- তা পালন করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।