মনকে প্রশান্তি ও কাজের উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে বিনোদন খুবই জরুরি। তা হতে পারে কারো সঙ্গে গল্প, কৌতুক, রসিকতা কিংবা কারো জীবনের ভালো দিক বা পুরনো কোনো স্মৃতি নিয়ে বন্ধু-বান্ধব বা আপনজনদের সঙ্গে আলোচনা করা।তবে এসব হাস্যরস, কৌতুক কিংবা রসিকতায়ও থাকতে হবে শালীনতা ও সীমাবদ্ধতা। এমন কোনো ঘটনার বর্ণনা বা রসিকতা করা যাবে না যাতে শোরগোল বা গোনাহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ হয় তাও করা যাবে না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে রসিকতা ও সুন্দর সুন্দর ঘটনার বর্ণনায় মেতে উঠতেন। হাদিসে এ রকম অনেক ঘটনার বর্ণনা এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে (চলাচলের জন্য) বাহন (উট) জন্তু চেয়ে বসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তোমাকে একটা উটনির বাচ্চা দেব। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি (উটনি) বাচ্চা দিয়ে কী করব? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আরে সব উট কি উটনীর বাচ্চা নয়? (আবু দাউদ, তিরমিজি)
রসিকতা কিংবা কৌতুক মানুষকে প্রশান্তি দেয়। মানুষের রাগ দমন করে। মানসিক প্রশান্তির অন্যতম চিকিৎসাও গল্প, রসিকতা ও কৌতুক। আপনজনদের কেউ যখন হঠাৎ রেগে যায় তখন রসিকতা দ্বারাই সাধারণত তা দমন বা থামানোর চেষ্টা করা হয়। রসিকতা গল্প কিংবা কৌতুকের অভিজ্ঞতা কমবেশি সবারই আছে। তবে শান্তি ও সমাধান খুঁজতে গিয়ে এমন কোনো রসিকতা করা যাবে না যে রসিকতায় মানুষকে গোনাহের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। কেননা ব্যবহারের অসাবধানতায় মানুষের অনেক প্রিয় জিনিসও ভীষন অপ্রীতিকর ও মন্দে পরিণত হয়।
>> রসিকতার নামে মিথ্যা বা গোনাহ করা যাবে না
এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে কৌতুক ও রসিকতা করলেও এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলেছেন-
‘তোমার তোমাদের ভাইয়ের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ো না এবং তার সঙ্গে পরিহাস করো না।’
মাঝে মাঝে মানুষের রসিকতা এমন লাগমহীন হয়ে যায় যে, তা দ্বারা সম্মানহানি হয়। মিথ্যার প্রচলন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কেউ কেউ আবার এ দ্বারা আন্তরিকভাবে কষ্ট পায়। যা ইসলামে পুরোপুরি হারাম ও কবিরা গোনাহ।
>> রসিকতার নামে কষ্ট দেয়া যাবে না
রসিকতার মাত্রা যেন শারীরিক কষ্টের দিকে ধাবিত না হয়। কারণ অনেকেই ঠাট্টার ছলে মুসাহাফার নামে হাতে চাপ দেয়, মাথার চুল ধরে টান দেয়, শরীরের চিমটি কাটে কিংবা দুই আঙুলে চামড়ার দলন দেয়। বিশেষ করে শিশুদের সঙ্গে এ জিনিসগুলো বেশি করা হয়। যা নির্মম নিষ্ঠুরতা ছাড়া কিছুই নয়। বরং ঠাট্টার ছলে রসিকতার নামে জুলুমই বটে।
>> রসিকতার নামে কাউকে ক্ষেপানো যাবে না
নির্দিষ্ট কোনো কথা বা ইঙ্গিত করলে কিছু মানুষ ক্ষেপে যান। কিংবা বিরক্তি বা লজ্জাকর কোনো কথা একাধিকবার বললে অনেকেই ক্ষেপে যায়। এমন কোনো বিরক্তিকর বা ক্ষেপে যাওয়ার মতো কোনো কথাও ঠাট্টার ছলে রসিকতা বা কৌতুক করে বলা যাবে না।
কেননা বিরক্তি মানুষকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়। আর যখন সংঘাত বেধে যায় তখন শয়তান সেখানে প্রচণ্ড আকারে প্ররোচিত করতে থাকে। আর তাতে বড় ধরনের ফাসাদ বা ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। তখন এ ঝগড়া জখম তথা হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত গিয়ে পৌছে। সুতরাং রসিকতার নামে কাউকে ক্ষেপানো যাবে না।
>> রসিকতার আদব হলো-
ছোট-বড় সবার সঙ্গে রসিকতা ও কৌতুক হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ছোটদের রসিকতা যেন বড়দের সঙ্গে আদবের গণ্ডি-অতিক্রম করে বেয়াদবি না হয়ে যায়। আবার বড়দের রসিকতায় যেন ছোটদের প্রতি আদর-স্নেহ অব্যাহত থাকার পরিবর্তে জুলুমে পরিণত না হয়।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে-
একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আয়তনে ছোট) একটি তাঁবুর মধ্যে অবস্থান করছিলেন। সে সময় এক সাহাবি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে ভেতরে যেতে বললেন। কিন্তু তাঁবুটি ছিল বেশ ছোট। সাহাবি রসিকতা করে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পুরো শরীর নিয়েই ভেতরে আসবো নাকি আংশিক? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, পুরোটাই ‘ (আবু দাউদ)
রসিকতা, কৌতুক ও ভালো গল্প যেন শুধু প্রশান্তির জন্য হয়। এ বিষয়টি লক্ষ রেখেই ছোট-বড়দের সম্মান ও স্নেহের কথা মনে রেখে অবস্থানভেদে সবার সঙ্গে উত্তম রসিকতা ও কৌতুক ও গল্প করা যেতে পারে। গোনাহ হবে এ ধরনের সব রসিকতা ও গল্প ত্যাগ করাও আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রসিকতার নামে সব ধরনের মিথ্যা, কষ্টদায়ক ও গোনাহের শামিল রসিকতা ও কৌতুক থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।