১৫ জানুয়ারি, বুধবার, ফুলতলী ছাহেব বাড়ি সংলগ্ন বালাই হাওরে অনুষ্ঠিত হয়েছে আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর ১৭তম ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষে বিশাল ঈসালে সাওয়াব মাহফিল। মাহফিলে কয়েক লক্ষ মানুষের উপস্থিতি ছিল, যেখানে ধর্মীয় আবেগঘন পরিবেশে মুরিদীন-মুহিব্বীনের উদ্দেশ্যে তা’লীম-তরবিয়ত পেশ করেন আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরী, উস্তাযুল উলামা ওয়াল মুহাদ্দিসীন, মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী।
মাহফিলের শুরুতেই তিনি যুগে যুগে যালিমদের আবির্ভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, যে সকল শাসক জনগণের অধিকার চ্যুত করেছে, তাদের মধ্যে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হাজ্জাজ কর্তৃত্ব রক্ষার জন্য হাজার হাজার আলিম-উলামাকে হত্যা করে এবং নিজের বাহাদুরী প্রদর্শনের জন্য নানা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিল। এই প্রসঙ্গে হযরত হাসান বসরী (র.)-এর কথা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, নমরূদের প্রাসাদও হাজ্জাজের প্রাসাদ অপেক্ষা উন্নত ছিল।
তিনি আরো বলেন, আল্লাহর নিদর্শনাবলির প্রতি সম্মান না থাকলে তাকওয়া বিনষ্ট হয়। বিশেষ করে কুরআন এবং হাদীসের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মানুষের মন যদি আল্লাহর পথে খাটি থাকে, তাহলে দীন-দুঃখী মানুষের পাশে থাকা তাদের খেদমত করা সবচেয়ে বড় শান্তি প্রদানকারী কাজ।
মাহফিলে উপস্থিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা বিশেষত ধর্মীয় শিক্ষক ও আলেমগণ, যাদেরকে সমাজের মূল শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তারা একযোগে দেশের শান্তি এবং কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। মাহফিলের পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাওলানা আহমদ হাসান চৌধুরী, মাওলানা নজমুল হুদা খান, এবং মাওলানা রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী।
এছাড়াও, মাহফিলে বর্ণনা করা হয়, কিভাবে আমাদের সমাজের দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় এবং কিভাবে আল্লাহর পথে সহযোগিতা করে সুখী হওয়া সম্ভব। মাহফিলের আলোচনায় অনেক অতিথি ইসলামের মৌলিক মূলনীতি এবং জীবনধারণের শুদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করেন।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় হাজারো মুরীদীনসহ উপস্থিত সবাই আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর মাজার যিয়ারতের মাধ্যমে মাহফিলের কার্যক্রম শুরু করেন। এরপর খতমে কুরআন, খতমে বুখারী, খতমে খাজেগান, খতমে দালাইলুল খাইরাতসহ স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আরও অনেক আলেম-ওলামা, যাদের মধ্যে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দিন প্রমুখ।
হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, মনের আবেগে দীন-দুঃখী মানুষের পাশে থাকলেই জীবনে এক প্রকার প্রশান্তি পাওয়া যায়। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি তাদের উদ্যোগে বন্যার্তদের জন্য গৃহনির্মাণ এবং শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এসব মানবিক কাজই প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা, যেখানে অন্যদের জন্য কাজ করা এবং তাদের দুর্দশা লাঘব করা সবচেয়ে বড় পুরস্কার।
এছাড়াও, মাহফিলে বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। তিনি বলেন, মুমিন যদি চারা লাগায় এবং তা থেকে মানুষ বা পশু-পাখি খাদ্য গ্রহণ করে, তা হবে সদকাহ। ইসলামে এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরস্কৃত হিসেবে গণ্য করা হয়।
মাহফিলের এক পর্যায়ে তিনি দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, কখনও কখনও দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যেখানে অবিচার ও দুর্নীতির শিকার হতে হয়। তবে, তিনি সকলকে মনে করিয়ে দেন যে, আমরা যেন কখনো যালিম না হই, মজলুম না হই এবং সর্বাবস্থায় ন্যায়ের পথে অবিচল থাকি। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
মাহফিলের পর, উপস্থিত আলেম-ওলামা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিরা একযোগে দেশের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দোয়া করেন। মাহফিলের শেষ পর্যায়ে শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে নানা বক্তব্য প্রদান করা হয় এবং উপস্থিত সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া করেন যাতে দেশের সার্বিক উন্নতি হয় এবং অশুভ শক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মাহফিলটি অত্যন্ত সফলভাবে শেষ হয় এবং সকলকে আল্লাহর পথে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।