বুঝে-শুনে নির্বাচনের ফাঁদে পা দেয় বিএনপি !

Ziaul Hoque
জিয়াউল হক, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২২, ২:৩৩

শেয়ার করুনঃ
বুঝে-শুনে নির্বাচনের ফাঁদে পা দেয় বিএনপি !

আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না- এমন অভিযোগ করে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। দলটির দাবি ছিল- নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। একই দাবি ছিল ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। কিন্তু, নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে হঠাৎ সরে আসে। বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয় বিএনপি। পরে বদরুদ্দোজা চৌধুরী জোট থেকে বের হয়ে গেলেও ডা. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নির্বাচনে যায় দলটি।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কারণে বরাবরই দলের হাইকমান্ডকে দুষছে তৃণমূলের একাংশ। ড. কামালের পাতা ফাঁদ বুঝতে না পারার জন্য হাইকমান্ডকে দোষারোপ করেন। তবে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে হাইকমান্ডের নজর ছিল সুদূরপ্রসারী। ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে ভালোভাবেই জানতেন তারা। দলের ভাঙন ঠেকাতে সে সময় ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়া। বিএনপিকে ভাঙার যে ষড়যন্ত্র তখন হয়েছিল তা বানচাল করতেও সক্ষম হয়।

দলটির একটি সূত্র জানান, নির্বাচনে না গেলে বিএনপির থেকে কিছু নেতা বের হয়ে যেত। আমরা ১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করি। স্বাভাবিকভাবে ১৮ সালের নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে মাঠ-পর্যায়ের নেতাকর্মীদের একাংশের চাপ ছিল। বাংলাদেশের রাজনীতিই হচ্ছে নির্বাচনমূখী। কয়েকজন নেতা নির্বাচনে যেতে উদগ্রীব ছিলেন।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী- ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হয়। সেখানে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, আ স ম আবদুর রবসহ বেশ কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন। ফলে বিএনপি নির্বাচনে না গেলে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে এরা শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করত। অন্যদিকে বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্যের একটা অংশ ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন। এই সংখ্যাটা প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জনের মত। এর বাইরেও কিছু দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতা ছিলেন। সে সময়ে ঐক্যফ্রন্টে যাওয়া ছাড়া বিএনপির সামনে কোনো রাস্তা ছিল না। দলের ভাঙন ঠেকাতে ঐক্যফ্রন্টে যাওয়া অপরিহার্য ছিল। এক রকম জেনেশুনে, বুঝে ফাঁদে পা দেয় বিএনপি।

বিএনপির আরেক দায়িত্বশীল সূত্র জানান, নির্বাচনে না গেলে আমাদের কিছু সাবেক সংসদ সদস্য ও তৃণমূল নেতাকর্মী ঐক্যফ্রন্টে চলে যেত। ঐক্যফ্রন্ট শক্তিশালী হত। নির্বাচনের পরিবেশও সহজ করে দিত আওয়ামী লীগ। ঐক্যফ্রন্টকে ৪০-৫০টি আসনও হয়ত দিয়ে দিত। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় এটাও বোঝাতে সক্ষম হত আওয়ামী লীগ। বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি এখানের থেকে আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে যেত।

বিএনপি নেতাদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান অবস্থা ২০১৮ সালের মতো না। দেশের সকল মানুষ জেনে গেছে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বিএনপি, এমনকি আওয়ামী লীগের লোকজনও জানে শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এটাই বোঝাতে চেয়েছি। আমরা সফলও হয়েছি। এটা বোঝানোর জন্য মাঝে কয়েকটি নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে হয়েছে। এবার তৃণমূল থেকে নির্বাচনে যাওয়ারও কোনো চাপ নেই। দলের কেউ চায় না আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন করতে। সবাই মনে করে বিএনপির বাইরে কোনো জোট হলে সেটা আওয়ামী লীগের বি-টিম হবে।

https://enews71.com/storage/ads/01JQ184AJV9F0T856X9BBSG85X.gif

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এটা তৃণমূলের দাবি, তৃণমূলের মতামতের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড।

২০১৮ সালে বিএনপির ভরাডুবি হলেও দীর্ঘ মেয়াদি লাভবান হয়েছে দলটি। সুশীল ও নাগরিক সমাজকে বোঝানো গেছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। নির্বাচনে গিয়েই এটা বোঝানো গেছে। নির্বাচনে না গেলে এটা বোঝানো যেত না। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নেতাকর্মীও বুঝেছে। তৃণমূল থেকে হাইকমান্ড-এক সিদ্ধান্তে অটল। অতীতের তুলনায় বেশি সংগঠিত। এক দফায় সবাই অটল। এটাই বিএনপির অর্জন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করার পর আমরা স্থানীয় সরকার পৌরসভার, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে গিয়েছিলাম। সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা বিএনপি প্রতীকধারীরা পেয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে গায়েবি-ভুয়া মামলা দিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে বরখাস্ত করা হয়। ঠিকঠাক মত তাদেরকে কাজ করতে দেয়া হয় নাই। কারাগারে অনেক মারাও যান। নির্বাচন বর্জন, নির্বাচনে যাওয়া, নির্বাচিত হয়েও তো কিছু হচ্ছে না। সবটাই করে দেখেছি আমরা।

তিনি আরো বলেন, সুশীল সমাজ, দেশ নিয়ে চিন্তা করেন এমন কিছু ভালো মানুষ আমাদেরকে নির্বাচনে যেতে বলেছিল। বলেছিল আপনারা আগের নির্বাচনে যাননি, এবার যান, যেয়ে দেখেন। প্রধানমন্ত্রীও বলেছিল নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু আমারা দেখেছি উল্টোটা হয়েছে।

নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপির উল্লেখযোগ্য কোনো নেতা দল ছেড়ে যায়নি বলে মনে করে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে জুলুম-নির্যাতনের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য কোনো বিএনপি নেতা দল ছেড়ে যায়নি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আমাদের কথা দিয়েছিলেন যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। সকল রাজনৈতিক নেতাদের সামনেই কথা দিয়েছিলেন। আমরা বিশ্বাস করে তখন নির্বাচনে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ভয়ংকরভাবে কারচুপি হয়েছে।

https://enews71.com/storage/ads/01JR36BQSKCPE69WB8Z3TARXE3.jpg

সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা

https://enews71.com/storage/ads/01JR3CX28Y9BM01PRE4TXCNDWF.jpg

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

ক্ষমতায় এলে ‘ভারতের দাদাগিরি’ বন্ধে অগ্রাধিকার দেবে বিএনপি: মির্জা ফখরুল

ক্ষমতায় এলে ‘ভারতের দাদাগিরি’ বন্ধে অগ্রাধিকার দেবে বিএনপি: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি—জনগণের ভোটে সরকারে এলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস এবং বাংলাদেশের ওপর ‘দাদাগিরি’ বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত রাবার ড্যাম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে। ১৯৭১ সালে ভারতের সহায়তার কথা

ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে : আমীর খসরু

ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে : আমীর খসরু

দেশের মানুষ এখন ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “আজকে সবাই অপেক্ষা করছে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য। নির্বাচিত সরকার এলে সাংবিধানিক, অর্থনৈতিকসহ সব ধরনের সমস্যার সমাধান হবে।” শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের হোটেল পেনিনসুলায় চট্টগ্রাম ট্রাভেল ফোরাম আয়োজিত সেমিনারে অংশ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি—এটিএম মাসুমের হুঁশিয়ারি

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি—এটিএম মাসুমের হুঁশিয়ারি

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের জোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম। তিনি বলেছেন, “আগে গণভোট, পরে জাতীয় নির্বাচন, না হলে নির্বাচন হবে না।” শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে নোয়াখালী পৌরবাজারে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বাজার চত্বর থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ

গণভোটে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি: জামায়াতে ইসলামী

গণভোটে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি: জামায়াতে ইসলামী

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে একইসঙ্গে গণভোট আয়োজন জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হয়নি। জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের ঘোষণা আমাদের সংকটমুক্ত, স্বচ্ছ নির্বাচনের আশা পূরণ করতে পারেনি। জনগণের আকাঙ্ক্ষা

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ‘জুলাই সনদ লঙ্ঘনের’ অভিযোগ বিএনপির

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ‘জুলাই সনদ লঙ্ঘনের’ অভিযোগ বিএনপির

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জুলাই সনদ লঙ্ঘন হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “সংবিধান সংস্কার পরিষদ একটি নতুন ধারণা, যা জুলাই সনদের আলোচনার অংশ ছিল না। ঐকমত্য কমিশনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।” তিনি আরও দাবি