প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১২:১৭
২০২৪ সালের ১৫ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলন চরম উত্তেজনায় রূপ নেয়, যখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায়। এর আগে ১৪ জুলাই রাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ কটূক্তির প্রতিবাদে ঢাবি ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে। শত শত শিক্ষার্থী আবাসিক হল থেকে বেরিয়ে রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানায়। পরদিন দুপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়, তবে বিকেল ৩টার দিকে বিজয় একাত্তর হল এলাকায় প্রথম সংঘর্ষ শুরু হয়।
ঘটনার সূত্রপাতের পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আশপাশের হল এবং মধুর ক্যান্টিন থেকে এসে মল চত্বরে আন্দোলনকারীদের ওপর রড, হকিস্টিক ও রামদা নিয়ে হামলা চালায়। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের চেষ্টা করলে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ও চিকিৎসাকেন্দ্রেও হামলার শিকার হন। এদিন শুধু ঢাবিতেই ২৯৭ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন, আর সারাদেশে আহত হয় প্রায় ৪০০ জনের বেশি।
একই দিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর এম এম কলেজসহ দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে এবং আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পরও হামলা চলতে থাকে। রাতে হলে হলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মোবাইল তল্লাশি ও মারধরের ঘটনা ঘটে, আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলেই হুমকি ও শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।
ইডেন মহিলা কলেজেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দেওয়া হয় এবং গেটে তালা দেওয়া হয়। তবুও তালা ভেঙে কিছু শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেন। একইভাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা অতিক্রম করে রাজু ভাস্কর্যে যোগ দেন, যেখানে আগেই সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাত ও দিনভর হামলা চলে, আহত হন অন্তত ১৫ জন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ স্লোগান দেওয়াকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন, আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী একে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বলে আখ্যা দেন এবং ‘এ যুগের রাজাকার’ বলে সমালোচনা করেন। এই অবস্থার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই দেশব্যাপী ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ডাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে দুঃখ প্রকাশের দাবি জানান।