ডাকাতি ও একই সাথে ধর্ষণ তাদের উদ্দেশ্যে ছিলঃ পুলিশ সুপার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৫০ অপরাহ্ন
ডাকাতি ও একই সাথে ধর্ষণ তাদের উদ্দেশ্যে ছিলঃ পুলিশ সুপার

খাগড়াছড়িতে চাঞ্চল্যকর ডাকাতিও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারী গণধর্ষণের ঘটনার ক্লু উদঘাটন করেছেন পুলিশ। একটি পাহাড়ি বাড়িতে এ ঘটনায় ৯ জন পেশাদার ডাকাত অংশ নেয় এবং ডাকাতি ও একই সাথে ধর্ষণ তাদের উদ্দেশ্যে ছিল বলে জানান খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ।চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা নিয়ে রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফিং করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ও খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আব্দুল আজিজ।

পুলিশ সুপার আব্দুল আজিজ সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে ঘটনার পরপরই পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালিয়ে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে।তাদের কাছ থেকে স্বর্ণ বিক্রয়ের টাকা, লুণ্ঠিত টাকা এবং মোবাইলসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত সিএনজি এবং দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্বার করা হয়।আটকরা হলেন,

খাগড়াছড়ির রামগড়ের তৈচালা এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে মো. আল আমিন (৪০), একই উপজেলার দারোগাপাড়া এলাকার আহমদ উল্লাহর ছেলে মো. অন্তর (২০), মাটিরাঙ্গার আদর্শ গ্রাম এলাকার হাবিল মিয়ার ছেলে মো. আব্দুল হালিম (২৮) ও মুসলিম পাড়ার শামছুল হকের ছেলে মো. আব্দুর রশিদ (৩৭), গুইমারার বড়পিলাক এলাকার আকবর আলীর ছেলে মো. ইকবাল হোসেন (২১) ও আব্দুল কাদেরের ছেলে মো. শাহিন মিয়া (১৯) এবং খাগড়াছড়ির কুমিল্লাটিলা এলাকার আকবর আলীর ছেলে মো. বেলাল (৩২)।

রোববার আটক ধর্ষক ৭ ডাকাতকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হবে।শনিবার বিকেলে গণধর্ষণের শিকার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। পরে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি নিয়ে তাকে তার মায়ের হেফাজতে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয় আগে বিভিন্ন অপরাধে জেলাখানায় থাকা অবস্থায় আসামিরা একে অপরের সাথে পরিচিত হন।সেখান থেকে অপরাধের ছক কষেন তারা।সবশেষ খাগড়াছড়ির বলপেইয়া পাড়ায় অনেকটা নির্জন জায়গায় অবস্থিত একটি ঘর ঘিরে তারা পরিকল্পনা করেন।

জানা যায়, মো. আমিন এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তার কথা মত সিএনজি চালক শাহিন রামগড় থেকে অন্তর এবং জালিয়াপাড়া থেকে ইকবালকে নিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় খাগড়াছড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মাটিরাঙ্গা থেকে সাইফুল, রশিদ ও বেলালকে নিয়ে খাগড়াছড়ি আসেন।এ সময় তাদের কাছে ছুরি, শাবল, দাসহ অস্ত্রসন্ত্র ছিল। খাগড়াছড়ি জিরোমাইলে পৌঁছালে মূলহোতা আমিন ও হালিম তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে সময় কাটিয়ে গভীর রাতে ঘটনাস্থলে আসেন।ঘটনাস্থলে এসে শাহিন ও বেলাল ঘরের দেওয়াল বেয়ে ভেতরে ঢুকে মূল ফটক খুলে দিলে বাকিরা প্রবেশ করেন।এ সময় রশিদ ও হালিম গেটে অবস্থান নেন এবং আমিন, সাইফুল ও বেলাল ঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন।

এ সময় শব্দ পেয়ে গৃহকর্ত্রীর ঘুম ভেঙে গেলে দরজার সামনে এসে ডাকাত দলের উপস্থিতি টের পান।তিনি চিৎকার করলে দ্রুত শাবল দিয়ে দরজা ভেঙে ডাকাত দল ঘরে প্রবেশ করে। তাৎক্ষণিকভাবে ইকবাল, ফারুক ও শাহিন ওড়না ও চার্জারের তার দিয়ে গৃহকর্তীর হাত মুখ বেঁধে জানালার গ্রিলের সাথে তাকে আটকে রাখেন।

প্রথম রুমে ঢুকে অসুস্থ গৃহকর্তাকে ডাকাতরা বেঁধে ফেলেন।এ সময় ঘর তছনছ করে স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল ও ক্যামেরা লুণ্ঠন করেন।অপর একটি রুমে হাত পা বেঁধে রেখে সাইফুল, অন্তর, আমিন, ফারুক ও সিএনজি চালক শাহিন একাধিকবার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নারীকে (২৬) উপর্যুপরি ধর্ষণ করেন। দুই ঘণ্টা ধরে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে তারা ঘর থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী একটি গ্যারেজে রাখা সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে পালিয়ে যান।পরে সকালে গৃহকর্ত্রীর চিৎকারে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করেন।

পরে গৃহকর্ত্রী বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় ডাকাতি ও গণধর্ষনের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।এদিকে ঘটনার পরপর পুলিশ একাধিক টিমে ভাগ হয়ে মাঠে নামে। বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করা হয়।এখনো দুই জন পলাতক রয়েছেন।তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ বলেন,

আটকদের মধ্যে ইকবালের নামে ৪টি, আমিনের নামে ৩টি, শাহিনের নামে ১টি এবং অন্তরের নামে ২টি করে মামলা রয়েছে।পলাতক অপর দুই আসামিকে ধরতে অভিযান চলছে।চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এই ঘটনা পরিকল্পিত ছিল।কোন সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছিল না।কিন্তু কেউ কেউ এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে। আমরা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতার করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছি।