প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২:৪৪
শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আব্দুল মালেকের মতো হয়তো আরও অনেক মালেকই রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য সচিব এম এ মান্নান।সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেনে।তিনি বলেন, মালেক ড্রাইভারকে কেন এখনও বরখাস্ত করা হয়নি তা জানতে চাওয়া হবে।মালেকের নিয়োগকর্তা হলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।আমিই অফিদপ্তরে ফোন করে জানতে চাইবো, কেন মালেককে এখনও বরখাস্ত করা হয়নি?
মালেক বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ কী তা জানতে চাইলে সচিব বলেন, মালেকের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এছাড়া এখনি বরখাস্ত করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে।আমরা অন্যান্য মালেকদের বিষয়েও অনুসন্ধান শুরু করেছি। কাউকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, ছাড় পাওয়ার সুযোগ নাই।রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তুরাগ থানাধীন কামারপাড়ার ৪২ নম্বর বামনেরটেক হাজী কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার বাসা থেকে মালেককে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার পৃথক দুই মামলায় ৭ দিন করে তার মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা ম্যাট্রেপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম।
র্যাব জানায়, ড্রাইভার মালেকের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।সে তার এলাকায় সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শক্তির মহড়া ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে এবং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল।মালেক পেশায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের একজন ড্রাইভার এবং তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী।তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি।তিনি ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে ড্রাইভার হিসেবে যোগদান করেন।পরে ১৯৮৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করেন।বর্তমানে তিনি প্রেষণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন তৈরি করে নিজে সেই সংগঠনের সভাপতি হয়েছেন।এই পদের ক্ষমতাবলে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভারদের ওপর একছত্র আধিপত্য কায়েম করেছেন।ড্রাইভারদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির নামে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করতেন।এছাড়া তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসনকে জিম্মি করে বিভিন্ন ডাক্তারদের বদলি ও পদোন্নতি এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় ও বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম গত বছরের ২২ অক্টোবর তাকে দুদকে তলব করেন।তবে তার বিরুদ্ধে দুদক এখনও অনুসন্ধান শেষ করতে পারেনি।স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, যারাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাদের কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। আজকের মধ্যেই বরখাস্ত করার তাগিদ দেয়া হবে।আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন কাজ করছে। যারা দুর্নীতি করছে তাদের বিরুদ্ধে কাজ অব্যাহত রয়েছে। এক জায়গায় শিরোনাম দেখলাম, ‘সীমাহীন দুর্নীতি’ এগুলো আমার মনে হয় আমাদের যে নিয়ম আছে, তাতে মালেকের মতো লোক ছাড় পাবে না।