প্রকাশ: ৮ নভেম্বর ২০১৯, ১:১৭
চলতি বছর শুরু হওয়া ডেঙ্গু বিভিন্ন কারণে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। বরং বছরব্যাপী ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ওঠানামা করেছে। কখনও কখনও তা আশঙ্কাজনক পর্যায়েও চলে গেছে। আর ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা নিয়ে সরকারি হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি হিসাবের রয়েছে বিপুল পার্থক্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি হিসাবকে ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রকৃত রোগী ও প্রকৃত মৃত্যুর আসল চিত্র’ বলে ধরা যাবে না। তারা বলছেন, সরকারি হিসাবের চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখন থেকেই বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনা-কর্মকৌশল নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী কাজ না করলে আগামী বছর রোগটি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, চলতি বছরে গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকাসহ সারাদেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৭ হাজার ৩৯১ জন। হাসপাতাল ছেড়েছেন ৯৬ হাজার ৩৮৮ জন।
চলতি বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও রেকর্ড করেছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করতে গঠন করে একটি ডেথ রিভিউ কমিটি। ৭ নভেম্বর কন্ট্রোল রুম থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত আইইডিসিআরে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আসা ২৫১টি মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে ১৭৯টি পর্যালোচনা করে তারা ১১২টি মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। এর আগে ২০০০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল ৯৩টি।
কন্ট্রোল রুম জানায়, ৭ নভেম্বর পর্যন্ত এ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ২৯৫ জন। এখনও কমেনি ডেঙ্গুর প্রকোপ, কতদিন এ অবস্থা থাকবে সেটা বলতে পারছেন না কেউ। যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো দেশে মশা নিয়ন্ত্রণে। এখন থেকেই কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে, মশক নিধন কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ার কোনও সুযোগ নেই। নয়তো আগামী বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও ভয়াবহ হতে পারে।’
আতিক আহসান আরও বলেন, ‘যেখানে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে, সেখানেই মশা নিধনের ব্যবস্থা নিতে হবে, আর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কোথায় বেশি বা কম সেই বিষয়টি সবার আগে জানা প্রয়োজন। কারণ, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা জানা গেলেই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’
জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এসএম আলমগীর বলেন, ‘‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে যেসব কার্যক্রম চলছিল সে কাজগুলো চলমান রাখতে হবে, কোনোভাবেই এসব কাজ থামিয়ে দিলে চলবে না। একইসঙ্গে মানুষকে ব্যক্তিগতভাবেও সচেতন থাকতে হবে।’
আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা চাই এ কাজে সবাই অন্তর্ভুক্ত হোক। আর মশার জন্মস্থান যদি আমাদের হয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। যদি অন্য সংস্থার হয় তাহলে আমরা তাদের ডেকে বলবো, তারা যেন সেখানের ব্যবস্থা নেয়।’ রাজধানীর খালগুলো পরিষ্কার রাখার জন্যও ওয়াসার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব