মির্জাগঞ্জে আমন ক্ষেতে আলোক ফাঁদ ব্যবহারে কমছে ক্ষতিকর পোঁকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
উত্তম গোলদার
প্রকাশিত: বুধবার ২৩শে অক্টোবর ২০১৯ ০৮:০৭ অপরাহ্ন
মির্জাগঞ্জে আমন ক্ষেতে আলোক ফাঁদ ব্যবহারে কমছে ক্ষতিকর পোঁকা

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে আমন ধান ক্ষেতে পোঁকার আক্রমন ঠেকাতে ১১০টি আলোক ফাঁদ বসানো হয়েছে। আর আলোর ফাঁদের পাশাপাশি ক্ষেতে পাচিং পদ্ধিতিতে(ডাল পোতা) ব্যবহার করছে কৃষকরা। এসকল ব্যবহারে পোকা দমন করার কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। এ আলোর ফাঁদের ব্যবহারের ফলে কৃষকরা বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে পারবে বলে কৃষি বিভাগ জানান।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে চলিতি মৌসুমে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এরম্যধে উচ্চ ফলনশীল ব্রী-ধান-৫২ এবং ২৩ ধান চাষ করা হয়েছে ৮০০ হেক্টর জমিতে। বাকী ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। পোকার আক্রমন থেকে ফসল রক্ষা করার মাধ্যমে আশানুরূপ ফলন উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রতিবছরই হাজারো কৃষকের মাঝে জনপ্রিয়তা পেয়েছে মির্জাগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের ব্যতিক্রমী এই উদ্ভাবন পদ্ধতি। কৃষি কর্মকর্তাদের তদারিকতে কৃষকরা ধান রোপন শেষ হওয়ার পর থেকে জমিতে আলোক ফাঁদ স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন। এবছর ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর আমন ধান ক্ষেতে বসানো হচ্ছে ১১০টি আলোক ফাঁদ এবং আরো আলোক ফাঁদের কাজ চলমান আছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মোঃ গোলাম ফারুক সানু বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের আমন ধানক্ষেতে প্রতিবছরের মতো কৃষি বিভাগের তরফ থেকে ‘আলোক ফাঁদ’ স্থাপন করা হয়েছে। আলোর ফাঁদ বসিয়ে ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি জরিপ করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় পোকা বেশি দেখা যায় সেসব যায়গায় আলোক ফাঁদ বেশি বসানো হয়।

জমিতে রাতের বেলায় একটি স্থানে বালতির উপর অংশে বৈদ্যুতিক ভাল্বের আলো জ্বালিয়ে দিলে ক্ষেতের ভেতরে থাকা ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন ধরণের পোকা-মাকড় উড়ে এসে জড়ো হয়ে বালতির পানিতে পড়ছে। পরে এসব পোকা-মাকড় পানিতে আটকে গেলে আর উঠতে পারেনা। পরে পানিতে আটকা পড়া ক্ষতিকর পোকা মাকড়গুলোকে কৃষকরা মেরে ফেলেন। এভাবে আমন ধান ক্ষেত পোকা-মাকড়ের আক্রমন থেকে রক্ষা করা হচ্ছে। সথানীয় কৃষকরা বলেন, জমিতে এই পদ্ধতিতে আলোক ফাঁদ বসিয়ে এবং ডাল পোতার মাধ্যমে পোকা-মাকড়ের আক্রমন ঠেকাতে স্থানীয় কৃষকরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে কৃষি বিভাগের ব্যতিক্রমী এই উদ্ভাবনী দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরাফাত হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১১হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। চাষকৃত এসব জমিতে ১১০টি আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে এবং অস্থায়ী ভিত্তিত্বে আরো আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হবে।

ফলন ঘরে তোলার পর অস্থায়ী আলোর ফাঁদ গুলো উঠিয়ে নেয়া হবে। আলোর ফাঁদ স্থাপনের মাধ্যমে ক্ষেতে পোকামাকড়ের উপস্থিতি সনাক্ত করণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে সেমিনার করে চাষের আগে কৃষকদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবার বিষ মুক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য আলোক ফাঁদ পদ্ধতি বেশ উপযুগী। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, ফসলের জন্য ক্ষতিকর প্রাণী পোকামাকড় নির্ণয় এবং তা প্রতিরোধে ‘আলোক ফাঁদ’ পদ্ধতি একটি সফল ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনা। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা কোন ধরনের খরচ ছাড়াই সহজে ফসলের ক্ষতি ঠেকাতে পারে। প্রতিবছর কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আলোক ফাঁদ পদ্ধতির সুফল সর্ম্পকে কৃষকদেরকে ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি বলেই প্রতিবছর আলোক ফাঁদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।