ফুটবল ছেড়ে ব্যবসায় নামলেন সাফজয়ী আনাই মগিনি

নিজস্ব প্রতিবেদক
আরিফুল ইসলাম মহিন -খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বুধবার ২২শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৯:৪৮ অপরাহ্ন
ফুটবল ছেড়ে ব্যবসায় নামলেন সাফজয়ী আনাই মগিনি

পার্বত্য খাগড়াছড়ির আনাই মগিনি, যিনি বাংলাদেশের ফুটবলে একসময় আলো ছড়িয়েছিলেন, অভিমান থেকে বিদায় জানিয়েছেন ফুটবলকে। মাত্র ২১ বছর বয়সে ফুটবল ছেড়ে খাগড়াছড়িতে দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি। সাফজয়ী এই ফুটবলারের এমন সিদ্ধান্ত ফুটবলপ্রেমীদের কাছে বিস্ময়ের হলেও এর পেছনে রয়েছে অবহেলা আর হতাশার গল্প।  


২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফাইনালে তার অন্তিম মুহূর্তের গোলই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেছিল। সেই গোলটি বাংলাদেশকে এনে দেয় ১-০ ব্যবধানে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব। এরপর জাতীয় দলে ডাক পেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাকে একাধিক টুর্নামেন্টে উপেক্ষা করা হয়েছে। ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তার ছোট বোন আনুচিং মগিনি দলকে সাহায্য করলেও আনাই স্কোয়াডে জায়গা পাননি। এমনকি ভুটান সফরের দলে তাকে বিবেচনা করা হয়নি।  


একসময়ের প্রতিশ্রুতিশীল এই ফুটবলারের ক্যাম্পে যোগ না দেওয়ার কারণ হিসেবে তার ছোট বোন আনুচিং জানান, বারবার উপেক্ষার শিকার হয়ে আনাই ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দীর্ঘদিন অবহেলা আর সুযোগ না পাওয়ার কারণে তিনি অভিমানে ফুটবল থেকে সরে গেছেন।  


খাগড়াছড়ির নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা যমজ দুই বোন আনাই এবং আনুচিং ফুটবলকে ঘিরেই নিজেদের জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাদের পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে জন্মের পর তাদের দত্তক দেওয়ার কথাও ভাবা হয়েছিল। তখন শিক্ষক বীরসেন চাকমা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলেন।  


ফুটবল থেকে দূরে সরে গিয়ে আনাই এখন নিজের জীবন নিয়ে নতুনভাবে ভাবছেন। খাগড়াছড়িতে তিনি একটি দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছেন এবং সেটিই এখন তার আয়ের উৎস। আনুচিং জানান, দিদি ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন এবং এখন পুরোপুরি ব্যবসায় মনোযোগী।  


আনাই মগিনি যেমন ফুটবলে নিজের দক্ষতা দেখিয়েছিলেন, তেমনই ব্যবসার ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই সফল হবেন বলে আশা করছেন তার পরিবার ও পরিচিতজনেরা। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নারীদের সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছেন এই দুই বোন। ফুটবল ছেড়ে দিলেও তাদের সাহসিকতা ও উদ্যম অন্যদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।  


মাতৃতান্ত্রিক পাহাড়ি সমাজে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আনাইয়ের মতো একজন সংগ্রামী নারী নিজের পথ নিজেই তৈরি করছেন। ফুটবল মাঠে তার দাপুটে খেলা যেভাবে সাফল্য এনেছিল, নতুন জীবনের এই লড়াইতেও তিনি সফল হবেন বলে বিশ্বাস সবার।  


ফুটবল ছেড়ে আনাই হয়তো নতুন অধ্যায় শুরু করেছেন, তবে তার অবদান ফুটবলের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ফুটবলকে বিদায় জানিয়েও তিনি তার সংগ্রামী মানসিকতা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে প্রত্যাশা।