কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গাইতে গাইতে খুলনার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সর্বস্তরের জনতা। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসে বেদীতে জুতা পায়ে ওঠা, সংবাদ কর্মীদের সামনে ছবি তোলার হিড়িক, সেলফি তোলা, হৈ-হুল্লোড় করে বেদীর ফুলের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে চরম বিশৃঙ্খলায় খুলনায় একুশের প্রথম প্রহর কাটে। বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) একুশের প্রথম প্রহরে ১২টা ১ মিনিটে খুলনা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে হাজারো মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। তবে শ্রদ্ধা জানাতে এসে অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন অনেকে।
প্রতি বছর অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এলেই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকলে মেতে ওঠেন আনুষ্ঠানিকতায়। শহীদ মিনারে ফুল দিতে এসে চরম হুড়োহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কিতেই মেতে থাকেন অনেকে। শহীদ মিনারে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের নামে চলে অশ্রদ্ধা প্রদর্শন। শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদনে বেদীতে ফুল দিতে এসে জুতা পায়ে ওঠার ঘটনা ঘটে হরহামেশাই। প্রতিবছরের মতো এ ঘটনার ব্যত্যয় ঘটেনি এবারও। জুতা পায়ে বেদীতে ওঠার ঘটনা ঘটিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অঙ্গ-সংগঠন, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে এসে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়াও গণমাধ্যম কর্মীদের ক্যামেরার সামনে ছবি তোলার জন্য চরম বিশৃঙ্খলা করেন অনেক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কেউ কেউ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নামে ফুলের উপরে উঠে সেলফি তোলায় মত্ত থাকেন। আবার হই-হুল্লোড় করে শহীদ বেদীর ফুলের উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে ফুল ভেঙ্গে ফেলেন অনেক সংগঠন।
শহীদ মিনারের ঘোষণা মঞ্চ থেকে মাইকে নিষেধ জানানোর পরও শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে ওঠার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ মিনারের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা। সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বেদীতে শ্রদ্ধা জানাতে আসার পর তার সামনেই একদল মানুষ বিশৃঙ্খলা করতে করতে ফুলের উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মেয়র অনেক চেষ্টা করেও বিশৃঙ্খলা থামাতে পারেনি। মাইকে অসংখ্যবার বলা হয়েছে জুতা পায়ে শহীদ বেদীতে না উঠতে, এছাড়াও প্রত্যেকটা সংগঠন ও তাদের কর্মীদের জুতা পায়ে বেদীতে উঠতে নিষেধ করা সত্ত্বেও অসংখ্য রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন এ নিষেধাজ্ঞা মানেনি। মানুষের সচেতনতার অভাব এবং এ সম্পর্কে বড় পরিসরে প্রচারণার অভাবই এ ঘটনার পুনরাবৃত্তির জন্য দায়ী বলে মনে করেন অনেকে। শহীদ বেদীতে জুতা পায়ে ওঠার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক গণমাধ্যমকর্মীও।
এ সময় গণমাধ্যম কর্মীরা বলেন, 'শহীদ মিনারে যারা ফুল দিতে আসে, তারা বেশিরভাগই আসে ছবি তোলার জন্য আর লোক দেখানোর জন্য। তারা জানে না শহীদদেরকে কিভাবে সম্মান জানাতে হয়, কিভাবে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হয়। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে যদি ছবি তোলা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়, এরা কেউই আর আসবে না শ্রদ্ধা জানাতে। তাদের মধ্যে কোন চেতনা নেই, শহীদদের প্রতি, ভাষার প্রতি কোন শ্রদ্ধা নেই। তারা জুতা পায়ে শহীদ বেদীতে ওঠে, ফুল দিতে এসে সেলফি তোলে, ফটোসেশন করে। এদের বিবেকবোধ জাগেনি, তারা শ্রদ্ধা জানাতে জানে না কখনোই। এ কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে প্রচারণা প্রয়োজন।'
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।