প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে তিন দিন। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া ছয়জনের মরদেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি। সিএমএইচ-এর হিমঘরে রাখা মরদেহগুলো এতটাই অগ্নিদগ্ধ যে মুখমণ্ডল, পোশাক কিংবা শারীরিক গঠন থেকেও শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। ফলে চিকিৎসক ও তদন্তকারীরা এখন একমাত্র নির্ভর করছেন ডিএনএ পরীক্ষার ওপর।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, অগ্নিদগ্ধ মরদেহে সাধারণত আঙুলের ছাপ পাওয়া যায় না এবং চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। তবে দাঁত অনেক সময় আগুনে পুড়ে না গিয়ে টিকে থাকে, কেননা দাঁতের এনামেল শরীরের সবচেয়ে শক্ত উপাদান। দাঁতের ভেতরের পাল্প টিস্যুতে থাকা জীবিত কোষ অনেক সময় ডিএনএ পরীক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখে।
তবে যদি দাঁত নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসকরা মরদেহের হাড়ের ভেতরের অংশ অর্থাৎ বোন ম্যারো থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করছেন। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য স্বজনদের কাছ থেকে গালের কোষ, নখ ও চুলের গোড়া সংগ্রহ করে ডিএনএ মিলিয়ে শনাক্তের কাজ শুরু হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগ ও সিআইডি যৌথভাবে এই বিশ্লেষণের দায়িত্বে রয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ছয়টি মরদেহ এতটাই বিকৃত যে কারো লিঙ্গ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। সব মরদেহ ঢাকার সিএমএইচ মর্গে রাখা হয়েছে। এখান থেকে দাঁতের অংশ ও অন্যান্য কোষ নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ভারতের অগ্নিদগ্ধ বিশেষজ্ঞ দলের আগমনও শিগগিরই প্রত্যাশিত।
সিআইডির ফরেনসিক ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১১টি মরদেহের খণ্ড ও ১১ জন সম্ভাব্য দাবিদারের কাছ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে এবং ফলাফল পেতে সময় লাগবে ৭ থেকে ১০ দিন।
ঢাকা মেডিকেলের সহকারী অধ্যাপক ডা. মমতাজ আরা বলেন, ডিএনএ পরীক্ষা বর্তমানে অগ্নিদগ্ধ মরদেহ শনাক্তের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। দেশে এখন এই প্রযুক্তি যথেষ্ট উন্নত, ফলে সঠিকভাবে নমুনা বিশ্লেষণ করতে পারলে শনাক্ত করা যাবে নিশ্চিতভাবেই।
এদিকে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন জানিয়েছেন, তারা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে অত্যন্ত পেশাদারভাবে কাজটি করছেন, যাতে কোনো বিভ্রান্তি না হয় এবং শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া নির্ভুল হয়।
ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় এখন প্রহর গুনছেন নিহতদের স্বজনরা। শোকাহত পরিবারগুলোর একটাই চাওয়া— যেন দ্রুততম সময়ে তাদের প্রিয়জনদের মরদেহ তারা শনাক্ত করে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে পারে।