প্রকাশ: ২ জুলাই ২০২৫, ২১:৩২
নারীর প্রতি সহিংসতা বাংলাদেশে দিন দিন একটি নীরব সংকটের রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সবচেয়ে মর্মান্তিক বাস্তবতা হলো—এই সহিংসতার বড় অংশটি ঘটছে ঘরের মধ্যেই, স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর দ্বারা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)-এর ২০২৪ সালের একটি জরিপে উঠে এসেছে নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার এক ভয়াবহ চিত্র।
এই জরিপে দেখা যায়, দেশের অধিকাংশ নারী জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে স্বামী বা সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক, মানসিক, যৌন বা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বরিশালে এই হার ৮২ শতাংশ এবং খুলনায় ৮১ শতাংশ—অর্থাৎ প্রতি পাঁচ নারীর মধ্যে চারজনেরও বেশি এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে বেঁচে আছেন, যা আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে।
ঘর, যেটি নারীর জন্য নিরাপত্তার জায়গা হওয়ার কথা, তা আজ পরিণত হয়েছে একটি নীরব কারাগারে। যেখানে নারী একজন মা, শিক্ষার্থী কিংবা কর্মজীবী হিসেবে সমাজে সম্মান পান, সেখানেই তিনি সহ্য করেন সহিংসতা। এই সহিংসতা অনেক সময় তাকে পরিণত করে এক চুপচাপ সহ্য করে যাওয়া ‘শিকারী’তে, যার ভয়, লজ্জা বা ভাঙনের খবর কেউ জানতে চায় না।
বরিশাল ও খুলনার পাশাপাশি চট্টগ্রামে ৭৬ শতাংশ, ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে ৭৫ শতাংশ এবং রংপুরে ৭৪ শতাংশ নারী এই সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ঢাকায় ও সিলেটেও এই হার যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ। এটি স্পষ্ট করে যে, দেশের কোনো অঞ্চলই এই সহিংসতা থেকে মুক্ত নয়।
জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, জীবদ্দশায় বাংলাদেশের নারীদের সহিংসতার গড় হার ৭০ শতাংশ। শুধু গত এক বছরেই ৪১ শতাংশ নারী এই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দেশের বাস্তবতায় সংজ্ঞা বিস্তৃত করলে দেখা যায়, ৭৬ শতাংশ নারী জীবদ্দশায় এবং ৪৯ শতাংশ নারী গত এক বছরে সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে—প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলিতে এই হার আরও বেশি। দুর্যোগে যেমন ঘরের ছাদ উড়ে যায়, তেমনি নারীর নিরাপত্তা, সম্মান ও মানবাধিকারও হারিয়ে যায়।
এই বাস্তবতা শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং একটি জাতীয় সংকেত—ঘরের ভেতরের অন্ধকার যদি দূর না হয়, তাহলে নারীর জন্য নিরাপদ সমাজ কখনোই গড়ে উঠবে না।