প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১২:১৬
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আবারও বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের জন্য বড় সুসংবাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে এই প্রক্রিয়াটি এখন অনেকটাই চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে। জানা গেছে, ইতোমধ্যে ১২ লাখ কর্মীর জন্য সুযোগ তৈরির পরিকল্পনা শুরু হয়েছে এবং এর মধ্যে ৫০ হাজার শ্রমিককে বিনা খরচে পাঠানো হবে।
মালয়েশিয়ার পুত্রজয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেখানে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং দেশটির দুই মন্ত্রী যৌথভাবে অংশ নেবেন। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে শ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে, যা পুরো প্রক্রিয়াটিকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গত বছর অক্টোবরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশ সফরকালে শ্রম, বিনিয়োগ ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন। এই সফরের ধারাবাহিকতায় শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার বিষয়টি আলোচনায় অগ্রাধিকার পায়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি শ্রমিকদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশের শ্রমিকরা কোনোভাবেই আধুনিক দাস নয়। বরং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই শ্রমিক নিয়োগ করা হবে। এই অবস্থান দেশটির সরকারের সদিচ্ছার পরিচায়ক, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অগ্রগতি।
এই নতুন কর্মসংস্থান প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে, বাংলাদেশ প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পেতে পারে। কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সংখ্যক শ্রমিক পাঠানো গেলে বছরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার বাড়তি রেমিটেন্স আসবে।
তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শ্রমিকদের স্বল্প খরচে এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা। কে পাঠাল বা কোন এজেন্সির মাধ্যমে পাঠানো হলো সেটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো অভিবাসনের গুণগত মান ও শ্রমিকের নিরাপত্তা।
সবশেষে বলা যায়, মালয়েশিয়ায় পুনরায় শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক সুযোগ। এই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে, দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতিসঞ্চার হবে এবং লক্ষ লক্ষ কর্মজীবী মানুষ নতুন আশার আলো দেখবে।