প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৫, ১১:৪
সরকার পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনকে দায়িত্ব থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র আট মাসের মাথায় তাকে সরিয়ে দেওয়ার এই পদক্ষেপকে ঘিরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। যদিও এখনো সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি, তবে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত পালানোর পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে গত বছরের আগস্টে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। মাসখানেকের মধ্যে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তি বাতিল করে নতুন সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন জসীম উদ্দিন, যিনি তখন চীনে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন।
তবে চলতি মাসের শুরু থেকেই সচিব পরিবর্তনের গুঞ্জন জোরালো হতে থাকে। সূত্রগুলোর মতে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জসীম উদ্দিনকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি শিগগিরই দায়িত্ব থেকে বিদায় নেবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বর্তমানে বার্লিন সফরে থাকায়, তার দেশে ফেরার পর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে।
এই সিদ্ধান্ত কেবল মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে নয়, পুরো কূটনৈতিক অঙ্গন ও বিদেশি অংশীদারদের মাঝেও আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে জাপানের সঙ্গে আসন্ন বৈঠক স্থগিত ও পুনর্নির্ধারণের প্রক্রিয়া বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করেছে।
জাপানের টোকিওতে ১৫ মে বাংলাদেশ-জাপান এফওসি বৈঠকের কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে বৈঠক স্থগিতের অনুরোধ করা হয়। পররাষ্ট্র সচিবের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত বদলে সচিব (পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলামকে নেতৃত্ব দিতে পাঠানো হয়, যিনি এরইমধ্যে প্রতিনিধিদলসহ ঢাকা ত্যাগ করেছেন।
এই বৈঠকের গুরুত্ব আরও বেড়েছে কারণ চলতি মাসেই প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফরে যাচ্ছেন। সেই সফর নিয়ে আলোচনার বড় অংশ এই বৈঠকে উঠে আসবে বলে জানা গেছে। ফলে পররাষ্ট্র সচিব পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত অনেক গভীর বার্তা বহন করছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জসীম উদ্দিনের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে। তবে তাকে নতুন কোনো দায়িত্বে রাখা হবে কিনা, তা নিয়ে সরকার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। কাতার ও গ্রিসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিশনে কাজ করা এই অভিজ্ঞ কূটনীতিকের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই অনিশ্চিত।
বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন টোকিও, নয়াদিল্লি, ওয়াশিংটন ডিসি ও ইসলামাবাদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কনস্যুলার সেবায় উদ্ভাবনী ভূমিকার জন্য তার নেতৃত্বে এথেন্স দূতাবাস ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন পদক অর্জন করে।