রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শুরু হয়েছে পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫। মঙ্গলবার সকালে তিন দিনের এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে 'আমার পুলিশ আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ' স্লোগান সামনে রেখে এবারের আয়োজনে আনুষঙ্গিক অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের রেওয়াজ অনুযায়ী এবার আর বার্ষিক প্যারেড অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকও নেই এবারের সূচিতে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনী দিনে রাজারবাগ প্রাঙ্গণে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিল দেশের সব ইউনিট। ২০২৫ সালের পুলিশ সপ্তাহে এবার ৬২ জন পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন সম্মানজনক পদক। এই পদকপ্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আয়োজনটি মূলত চার দিনের হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তিন দিনেই সম্পন্ন হচ্ছে মূল কার্যক্রম। দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠিত হবে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবদের সমন্বয় সভা। তৃতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হবে আইজিপির নেতৃত্বে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মেলন। শেষদিন অর্থাৎ শুক্রবার পুনাক সমাবেশ ও আনন্দ মেলার মাধ্যমে পর্দা নামবে এবারের পুলিশ সপ্তাহের।
একসময় পুলিশ সপ্তাহ মানেই ছিল দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বাহিনীর সঙ্গে নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপের বড় সুযোগ। কিন্তু এবার সেই ঐতিহ্যগত সংযোগ না থাকলেও বাহিনীর পুনরুত্থানের বার্তাই প্রধান উপজীব্য। কারণ, গত বছরের গণআন্দোলনের সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে দেশজুড়ে প্রবল সমালোচনা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনে বিভিন্ন থানায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও মৃত্যুর ঘটনায় বাহিনীটির মনোবলে বড় ধাক্কা লাগে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল পুলিশ বাহিনীর আস্থা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। বর্তমান আয়োজনে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বিতভাবে পুলিশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা স্পষ্ট। তাই এবারকার পুলিশ সপ্তাহ শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একটি নিরীক্ষার সূচনাও বলা যায়। ভবিষ্যতের রাষ্ট্র কাঠামোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান কোন দিকে যাবে, তার একটা প্রাথমিক ইঙ্গিত মিলছে এ আয়োজনে।