মাদারীপুরের ডাসারে তিন ফসলি জমির মাটি কাটার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাতের আধারে ফসলি জমি কেটে ঘের তৈরির পাঁয়তারা করছেন, যা কৃষকদের জন্য বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা জানান, এই কার্যকলাপের ফলে তাদের জমির ক্ষতি হচ্ছে এবং কোনো ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে না। ঘটনাটি ডাসার থানায় জানিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটার কাজ বন্ধ করা হলেও, তা আবার শুরু হয়। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. দেলোয়ার আকন জানিয়েছেন, সম্প্রতি বাঘরিয়া গ্রামের মৃত মিলন খার ছেলে বাবুল খা ভেকু দিয়ে মাটি কাটা শুরু করেন। খবরটি রাতেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানকার কৃষকরা মাটি কাটা বন্ধ করার জন্য জমিতে চলে আসেন। কৃষকদের প্রতিবাদে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাটি কাটা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। তবে কিছুদিন পর আবারও মাটি কাটার পাঁয়তারা শুরু হয়।
বাগড়িয়া গ্রামের কৃষকরা জানান, বাবুল খা তিন ফসলি জমি জোর করে মাটি কাটতে চাচ্ছেন। এর ফলে কৃষকদের ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে এবং তাদের জমি অনাবাদী হয়ে পড়বে। কৃষক ছোলেমান খা বলেন, "আমরা কৃষিকাজ করে সংসার চালাই। যদি আমাদের জমি নষ্ট হয়, তাহলে আমাদের বিকল্প কিছু নেই, আমরা পথে বসে যাব।"
এদিকে, বালিগ্রাম ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. দেলোয়ার আকন অভিযোগ করেছেন, প্রভাবশালী ব্যক্তির টাকার দাপটে কৃষকদের ক্ষতি করা হচ্ছে। তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, "এ ধরনের কার্যকলাপ চলতে দেওয়া হবে না।"
কৃষকরা জানান, যদি মাটি কাটার এই প্রক্রিয়া বন্ধ না হয়, তাহলে তাদের সমস্ত ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে কৃষিকাজে তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। গ্রামের বাসিন্দা মোকছেদ সরদার বলেন, "যদি ঘের তৈরি হয়, তাহলে এই অঞ্চলের সমস্ত জমি পানিবন্ধি হয়ে যাবে এবং এখানে আর কোনো ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে না।"
অভিযুক্ত বাবুল খার চাচা কুদ্দুস খান বলেন, "এটা আমাদের জমি, আমরা চাইলে মাটি কাটব। অন্যরা এতে কী বলবে?" এই বক্তব্যে কৃষকদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। তাদের মতে, এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ না হলে তারা আর কোনো ফসল উৎপাদন করতে পারবেন না।
বালিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানিয়েছেন, এই ঘের তৈরির কাজ নিয়ে গ্রামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল। তিনি বলেন, "যদি এই ঘের তৈরির কাজ বন্ধ না হয়, তাহলে শতশত কৃষক তাদের জমি হারিয়ে ফেলবেন এবং কোনো ফসল ফলাতে পারবেন না।"
গ্রামের কৃষকরা তাদের জমি রক্ষা করতে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছেন এবং মাটি কাটার এই কাজ স্থায়ীভাবে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, যদি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হয়, তবে তারা আরো কঠোর আন্দোলন করতে প্রস্তুত।
ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান জানান, তিনি ইউএনও স্যারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছেন। তবে, স্থানীয় কৃষকরা আরও দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, কৃষকদের জীবনযাত্রা নির্ভর করছে এই জমি এবং ফসলের উপর, তাই এই সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তবে, এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, স্থানীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কখনও কখনও কৃষকদের জীবন ও জীবিকার প্রতি কতটা অবহেলা করতে পারেন। তাদের একতরফা সিদ্ধান্ত কৃষকদের দুরবস্থায় ফেলতে পারে। তাই, সরকারের উচিত দ্রুত এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করা।
সাম্প্রতিক এই ঘটনা মাদারীপুরের ডাসার এলাকার কৃষকদের জন্য এক বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। তারা আর কোনো অবস্থাতেই তাদের জমি নষ্ট হতে দেখতে চায় না এবং মাটি কাটা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানান।
এ ঘটনার পর, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের উচিত কৃষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং তাদের দাবির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, যাতে এই ধরনের ঘটনাগুলি ভবিষ্যতে আর ঘটতে না পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।