বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ‘বানৌজা সমুদ্র জয়’ জাহাজটি পাকিস্তানের করাচি শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। ২৬ জানুয়ারি, রোববার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করার পর, জাহাজটি ৭ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তানের করাচি বন্দরে অবস্থান করবে। এই সময়কালে, সেখানে ‘এক্সারসাইজ অমন ২০২৫’ নামের একটি আন্তর্জাতিক মহড়া অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নৌবাহিনীসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অংশ নেবে।
জাহাজটির নেতৃত্বে রয়েছেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। তার নেতৃত্বে মোট ২৭৪ জন নাবিক রয়েছেন, যার মধ্যে ৩৩ জন কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজটির যাত্রা শুরু করার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলি। তিনি জাহাজটির যাত্রার সময় সকল কর্মকর্তা ও নাবিকদের নিরাপত্তা এবং সফল অভিযানের জন্য শুভকামনা জানান।
বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সম্পর্কের উন্নতির লক্ষ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম এবং করাচি বন্দরের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ শুরু হয়। এর পর, পাকিস্তান থেকে ২১ ডিসেম্বর ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ নামক একটি কনটেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। এ জাহাজটি ৮২৫ টিইইউএস কনটেইনার নিয়ে আসে, যা বাংলাদেশের এবং পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই জাহাজের মহড়ায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পাকিস্তান সফরও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গত ১৭ জানুয়ারি, ছয় দিনের সফর শেষে, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসেন ছয়জন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা। তাদের সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর পর, ২১ জানুয়ারি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর একটি চার সদস্যের দল তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসে। এটি বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আরও একটি পদক্ষেপ। সামরিক দিক থেকে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং সংলাপের প্রক্রিয়া শক্তিশালী হতে পারে।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চীনে তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহ প্রকাশের সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। এই যুদ্ধবিমান কিনে বাংলাদেশ সামরিক সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করতে চায়। এই পদক্ষেপ সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ এবং প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি আরও উন্নত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশের নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক মহড়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের সামরিক সক্ষমতা তুলে ধরতে চায়। ‘বানৌজা সমুদ্র জয়’ জাহাজের করাচি সফর বাংলাদেশের নৌবাহিনীর সক্ষমতার একটি বড় প্রদর্শনী। এই মহড়ায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের নৌবাহিনী আন্তর্জাতিক সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণের গুরুত্ব এবং নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করার সুযোগ পাচ্ছে।
এমনকি, এই আন্তর্জাতিক মহড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক এবং সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। নৌবাহিনীর কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা এবং সমুদ্র পথে শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। এই ধরনের মহড়া সামরিক দক্ষতা এবং উপকরণ ব্যবহারের সমন্বয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ‘বানৌজা সমুদ্র জয়’ জাহাজের পাকিস্তান সফর বাংলাদেশের সামরিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে। এটি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রস্তুতি এবং সক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে। পাশাপাশি, এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থিতি এবং প্রভাব বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং পাকিস্তান নৌবাহিনীর মধ্যে এই ধরনের মহড়া এবং সহযোগিতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করবে এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একে অপরের সহায়ক হতে পারবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।