ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৮ হাজার কোটি কম রাজস্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ সাইফুল ইসলাম, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২৩শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:২৪ অপরাহ্ন
ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৮ হাজার কোটি কম রাজস্ব

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা কম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে রাজস্ব আদায় গত বছরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৯৯ শতাংশ কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত সরকারের সময় নেওয়া বড় রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাই এই ঘাটতির প্রধান কারণ। 


সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেছেন, বাস্তবতা বিবেচনা না করেই আগের সরকার উচ্চ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। পাশাপাশি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান ও অর্থনীতিতে গতি না ফেরার বিষয়টিও রাজস্ব আদায়ে প্রভাব ফেলেছে। এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোতেও কর্মীদের মধ্যে গা-ছাড়া ভাব কাজ করছে, যা রাজস্ব আদায়কে আরও মন্থর করেছে।


এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং বড় প্রকল্পে অর্থছাড় কমে যাওয়ার প্রভাবও রাজস্ব আদায়ে পড়েছে। এছাড়া, এনবিআর এখন আইভাস থেকে রাজস্ব হিসাব নিচ্ছে, যার ফলে বাড়তি আয় দেখানোর সুযোগ নেই।


ভ্যাট শাখার সাবেক সদস্য আলী আহমেদ বলেছেন, উন্নয়ন প্রকল্পে কাটছাঁট এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা ভ্যাট আদায় কমানোর প্রধান কারণ। তিনি উল্লেখ করেন, সরকারের মুদ্রানীতি এবং অর্থনীতির অস্থিরতা বিনিয়োগে প্রভাব ফেলছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্যে ধীরগতি সৃষ্টি করেছে। 


ডিসেম্বর মাসের হিসাব অনুযায়ী, আয়কর আদায় বেড়েছে ১৫ শতাংশ এবং আমদানি কর বেড়েছে ১০ শতাংশ। তবে ভ্যাট আদায় আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ কমেছে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, পরবর্তী মাসগুলোতে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় বাড়লে অর্থনীতির গতি ফিরে আসতে পারে। 


অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক আন্দোলন, ক্ষমতার পালাবদল, এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আয় করা সম্ভব হচ্ছে না। 


বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরগতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। তেলের দাম, ডলারের মূল্য এবং আমদানি কমায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নয়নই এই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হবে। 


এই পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের যৌথভাবে কাজ করা প্রয়োজন। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।