রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র উদ্ঘাটন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দুদক ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি দল এই অভিযান চালায়।
দুদক ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তালিকা অনুযায়ী ৮১ জন রোগীর জন্য ২২ কেজি ২০০ গ্রাম মুরগির মাংস বরাদ্দ থাকার কথা থাকলেও সরেজমিনে ওজন করে দেখা যায় মাত্র ১৫ কেজি ২০০ গ্রাম মাংস প্রস্তুত করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় ৭ কেজি মাংস কম সরবরাহ করা হয়েছে।
অভিযানকালে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মাঝে মধ্যে ব্রয়লার মুরগির মাংস ও পাঙ্গাশ মাছ পেলেও নির্ধারিত সময়ে খাসির মাংস কখনোই দেওয়া হয়নি। অথচ সরকারি নীতিমতে, প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন খাসির মাংস সরবরাহের কথা ছিল।
দুদকের সহকারী পরিচালক সরদার আবুল বাশার সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিটি কেজি মুরগির মাংসের বরাদ্দ ৩৯০ টাকা হলেও খাওয়ানো হচ্ছে ব্রয়লার মাংস, যা বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক কম। এ ছাড়া রোগীদের খাবার সংক্রান্ত তথ্যেও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে।”
হাসপাতালের চিকিৎসক উপস্থিতির দিকেও চিত্র বেশ করুণ। ৩২ জন চিকিৎসকের মধ্যে মাত্র ১৭ জনের নাম হাজিরা খাতায় ছিল। এর মধ্যে ৪ জন বদলি, ১ জন হাসপাতালে থাকলেও হাজিরা দেননি এবং বাকি ১০ জন একেবারেই অনুপস্থিত ছিলেন। হাসপাতালের হিসাবরক্ষক অভিযানের দিনও উপস্থিত ছিলেন না। তিনি আগের অভিযানেও অনুপস্থিত ছিলেন।
অভিযানে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. কামরুল ইসলামসহ আরও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অভিযান শেষে এসব অনিয়মের বিস্তারিত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. জিয়াউল হোসেন বলেন, “আগের অনিয়ম সম্পর্কে অবগত নই। তবে আজকের অভিযানে যেসব বিষয় পাওয়া গেছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই অভিযান প্রমাণ করে, সরকারি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় নজরদারির অভাব কতটা ভয়াবহ অনিয়মের জন্ম দেয়। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।