খিলি পান বিক্রী করে অভাবের সংসারের ঘানি টানছে ৮বছরের শিশু বাহারুল মোকতার। সে চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত মোতাছিন মোকতারের ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর থেকে অভাবের সংসারের খরচ মিটানোর জন্য স্থানীয় বাজারের অলিগলিতে খিলি পান বিক্রয় করে বাহারুল। তাঁর বন্ধুরা যখন খেলা করে বাহারুল তখন দোকানির কাছ থেকে পাইকারী পান কিনে বাজারে নিয়ে আসে বিক্রয়ের জন্য।
বাহারুলের বাবা মোতাসিন মোকতার আসলামপুরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে মাছ বিক্রয় করতেন। দীর্ঘদিন লিভার জটিলতায় অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসার অভাবে গত বছর মারা যান তিনি। জানা যায়, বাহারুলের বাবা মোতাসিন মৃত্যুর আগে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋন নেন।
বাবার মৃত্যুর পরে ঋনের ওই টাকা পরিশোধে এবং সংসারের অভাব ঘুচানোর জন্য মাত্র ৮বছর বয়সেই সে উপার্জনের হাল (খিলি পানের বাকসো) কাঁধে নিয়ে ঘুরছে ক্রেতাদের কাছে। বাহারুলরা ২ভাই ও ১বোন। বড় বোন স্থানীয় বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়লেও অভাবের কারণে তা বন্ধের পথে। বাহারুল সংসারের ছোট ছেলে।
তাঁর বড়ভাই শাহারুল (১২) বাজারের একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করছে। বাহারুল স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় তাঁর অসুস্থ্য বাবা মারা যান।
শিশু বাহারুল বলেন, আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। আমার বাবাকে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। যদি পড়া লেখা করার সুযোগ পাই তাহলে ডাক্তার হয়ে দরিদ্র অসহায় মানুষের সেবা করতে চাই।
বাহারুলের মা নাছিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ্য হলে টাকার জন্য ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। স্বামীর মৃত্যুর আগে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে সুদে ঋণ নেই। এখন সংসারে অনেক অভাব অনটন চলছে। আমাদের সহযোগীতা করার মতো কাউকেই পাশে পাইনি। যদি কোনো সহায়তা পাই তাহলে সন্তানদের পড়ালেখা করাতে চাই।
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আমরা ওই শিশুটিকে শিক্ষা উপবৃত্তির ভাতার আওতায় আনার জন্য কাজ করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল নোমান রাহুল বলেন, ওই শিশুটির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তির পাশাপাশি শিক্ষা উপবৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।