বড়দিনের উৎসব চলাকালীন গির্জায় ঢুকে তাণ্ডব চালাল এক দল দুষ্কৃতী। শনিবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের তির বিজেপির দিকেই। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রবিবার তিন জনকে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ধৃতেরা বিজেপি কর্মী। যদিও এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই বলে দাবি করেছে গেরুয়া শিবির।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভগবানপুর থানার অন্তর্গত ওই গির্জায় বড়দিন উপলক্ষে শনিবার দুপুরে বিশেষ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। সেইসময় ওই গির্জায় একদল দুষ্কৃতী এসে চড়াও হয়। পুলিশের কাছে করা অভিযোগেগির্জার পাদ্রিজানিয়েছেন, ওই দিন দুপুর ২টো নাগাদ প্রথমে গির্জার বাইরে চড়াও হয় একদল লোক। সেইসময় গির্জার ভিতরে বেশ কিছু মানুষ প্রার্থনার জন্য ছিলেন। বাইরে হামলা হচ্ছে শুনে তাঁরা গির্জার ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়েন। এর পরেই ভিতরে ঢুকে আসে হামলাকারীরা। চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জানলার কাচ, মাইক্রোফোন। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে গির্জার মধ্যে ভাঙচুর চালানো হয় বলে জানিয়েছেন ওই পাদ্রি। তাঁর আরও অভিযোগ, বেরিয়ে যাওয়ার সময় বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি গাড়িতেও ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। গাড়িটি তাঁর বলে জানিয়েছেন ওই পাদ্রি।
এই হামলার ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা হলেন বুবুন প্রধান, উৎপল প্রধান এবং স্বপন বর্মা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ধৃতেরা এলাকায় বিজেপি করেন।তিন জনকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হলেই বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভি সলমন নিশাকুমার বলেন, ‘‘ওই গির্জায় হামলার খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। কিন্তু, তার আগেই সেখান থেকে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ইতিমধ্যেই আমরা তিন জনকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছি।তারাও খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে।’’ তিনি আরও জানান, এই হামলার ঘটনায় কেউ আহত না হলেও ওই গির্জার বেশ কিছু সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, হামলা চালানোর সময় একাধিক বোমার আওয়াজও শুনতে পেয়েছেন তাঁরা। পুলিশ সুপারের দাবি, তাঁরাও বোমার আওয়াজের অভিযোগের কথা শুনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘উৎসব চলার সময় বাজি ফাটানো হয়ে থাকতে পারে। সেটাকেই কেউ কেউ বোমার আওয়াজ ভেবেছেন, এমনটা হতে পারে। কারণ, বোমা ফাটানোর কোনও প্রমাণ আমরা পাইনি। তবে তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
বিজেপির তরফে অবশ্য ওই গির্জায় হামলার নিন্দা করে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নস্যাৎ করা হয়েছে। বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষের কথায়, ‘‘এই রকম কোনও হামলার কথা আমার জানা নেই। আমাদের দলের কর্মীরা এই রকম কিছু ঘটাবেন বলে আমি বিশ্বাস করি না।’’ রাজ্য পুলিশের এই প্রাক্তন উচ্চপদস্থ কর্ত্রীর কথায়, ‘‘কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেই হামলা হওয়া উচিত নয়। সব ধর্মের প্রতিষ্ঠানকেই সবাই মিলে রক্ষা করা উচিত। হামলা যদি হয়ে থাকে, তা হলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ কিন্তু হামলার অভিযোগে যে বিজেপি কর্মীরা গ্রেফতার হয়েছেন, তাঁদের সম্ভবত মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে— এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিজেপি নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘কেশপুরের ওসি এখন বিজেপি কর্মীদের ডেকে সরাসরি হুমকি দিচ্ছেন। তৃণমূলে না ফিরলে তিন মাস করে জেল খাটিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। ওসি বলছেন, তিনি নিজে হামলা করিয়ে বিজেপির ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেবেন। ভগবানপুরেও একই রকম কিছু ঘটে থাকতে পারে।’’ নাম না করে অধিকারী পরিবারের দিকেও আঙুল তোলেন ভারতী। তিনি বলেছেন, ‘‘ভগবানপুর, ভূপতিনগর, পটাশপুর, খেজুরিতে কাদের রাজ চলে, সেটা কারও অজানা নয়। ওই এলাকা বিজেপি কর্মীরা হামলা করবেন, এটা বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই।’’
এর আগে, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লির মতো জায়গায় গির্জায় ভাঙচুরের ঘটনা সামনে এসেছে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল রাতে ওড়িশার রাউরকেল্লার একটি ক্যাথলিক গির্জায় হামলা চালায় একদল লোক। ওই একই দিনে কাটরা জ্ঞানপল্লী গ্রামে একটি গির্জায় মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। তার আগে, ২০১৫ সালে দিল্লির বসন্ত কুঞ্জ এবং মধ্যপ্রদেশের জবলপুরেও গির্জায় হামলার ঘটনা ঘটে। তবে বাংলায় এমন ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।