প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১১:১৩
গাজায় চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থান নেওয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্থানীয় সময় বুধবার এক ঘোষণায় জানান, আলবানিজের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আলবানিজের কার্যকলাপ একটি উদ্দেশ্যমূলক কৌশল, যার মাধ্যমে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
আল জাজিরা জানায়, ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বর্তমানে জাতিসংঘের অধীন অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ইসরাইলি বাহিনীর কর্মকাণ্ডকে তিনি নির্দয় নিপীড়ন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে উল্লেখ করেন। বিশেষ করে গাজায় চলমান হামলা ও ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর আচরণের নথিপত্র প্রস্তুত করে তিনি জাতিসংঘে তা উপস্থাপন করায় দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইল ও তার মিত্রদের সমালোচনার মুখে পড়েন।
ইসরাইলপন্থী গোষ্ঠীগুলো বারবার আলবানিজকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানালেও তিনি নিজের অবস্থানে অনড় থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘মাফিয়া স্টাইলের ভয়ভীতি প্রদর্শনের কৌশলের বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই।’ তিনি আরও জানান, তিনি বরং এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানানো ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যস্ত রয়েছেন।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানাতে গিয়ে তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ করেন। আলবানিজ বলেন, গাজায় যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিমান চলাচল অব্যাহত রাখতে কিছু ইউরোপীয় দেশ নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিরোধী অবস্থান হিসেবে বিবেচিত।
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চললেও অনেক পশ্চিমা দেশ দ্বিমুখী অবস্থান নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, আলবানিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে মানবাধিকার রক্ষাকারী একজন কণ্ঠস্বরকে চুপ করিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে আলবানিজের সম্পদ জব্দ, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আলবানিজ এই সবকিছু অগ্রাহ্য করে বলেন, ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করা থেকে তিনি পিছিয়ে যাবেন না।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি, তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আলবানিজের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, এই নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ব্যবস্থার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের একটি বিপজ্জনক নজির।