ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক ওয়াক্ফ আইন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা নিয়ে বাংলাদেশের মন্তব্যকে অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “বাংলাদেশের তরফ থেকে যে মন্তব্য এসেছে, তা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর চলমান নির্যাতনের বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের সাথে তুলনা করার জন্য এটি একটি ছদ্মবেশী এবং ছলনাপূর্ণ প্রচেষ্টা, যেখানে এই ধরনের অপরাধের জন্য দায়ীরা এখনও মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অযৌক্তিক মন্তব্য করা এবং সদ্গুণের পরামর্শ প্রদানের পরিবর্তে বাংলাদেশ যদি তার নিজস্ব সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার দিকে মনোনিবেশ করে, তাহলে আরও ভাল করবে।”
এর আগে, গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মুসলিমদের সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
এই মন্তব্যই ভারতীয় সরকারের কড়া প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
ভারতে সম্প্রতি 'সংশোধিত ওয়াক্ফ বিল, ২০২৫' পাস হওয়ার পর থেকেই একাধিক রাজ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়। আইনটি ২ এপ্রিল লোকসভায় এবং ৩ এপ্রিল রাজ্যসভায় পাস হয়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর ৫ এপ্রিল তা আইনে পরিণত হয় এবং ৮ এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হয়।
আইন কার্যকরের পর রাজধানী দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, মণিপুরসহ বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায় এবং বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা ব্যাপক বিক্ষোভে অংশ নেন। সবচেয়ে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যের মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদীয়া প্রভৃতি জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষে মুর্শিদাবাদে তিনজন নিহত হন বলে জানা গেছে।
সহিংসতার ঘটনায় অন্তত দুই শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যদিও বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অধিকাংশ এলাকায় শান্তি ফিরেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ওয়াক্ফ আইন স্থগিতের দাবিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চে বুধবার থেকে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে আইনটি কার্যকরের সময় পিছিয়ে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
এই পুরো ঘটনার পটভূমিতে ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।