‘মোদি’ পদবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে দুই বছর জেলের সাজাপ্রাপ্ত রাহুল গান্ধীর সংসদ সদস্যের পদ খারিজ করেছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। শুক্রবার লোকসভা সচিবালয়ের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।
মোদি পদবি তুলে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে বৃহস্পতিবার ভারতের গুজরাতে সুরাত জেলা আদালত রাহুলকে দুই বছর জেলের সাজা দিয়েছিলেন। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-এর ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সংসদ সদস্যের পদ খারিজ করা হলো।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার নরেন্দ্র মোদি সরকারে বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপপ্রয়োগের অভিযোগ তুলে অন্য বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের পথে নেমেছে কংগ্রেস। শুক্রবার দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে ১২টি বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাম, জেডি(ইউ), ডিএমকের পাশাপাশি বৈঠকে ছিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিও (আপ)। এরপর সংসদ ভবন থেকে মিছিল করে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান তারা। ওই আইন বলছে, সংসদ সদস্যের পদ খারিজ হওয়া রাহুল অন্তত আগামী ছয় বছর কোনো ভোটে লড়তে পারবেন না।
সুরাত জেলা আদালতের বিচারক এইচ এইচ বর্মা রাহুলকে ১০ হাজার রুপির জামিনে মুক্তি দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে উচ্চতর আদালতে আপিল করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত করার ওপর কোনো স্থগিতাদেশ দেননি তিনি। আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এ ক্ষেত্রে ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সংসদ সদস্যের পদ রক্ষার পথে অন্তরায় হয়েছে, ২০১৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়। ঘটনাচক্রে, এক দশক আগে ওই রায় কার্যকর করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন তিনি নিজেই।
জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সংসদ সদস্য-বিধায়কের দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলে তৎক্ষণাৎ সংসদ সদস্য বা বিধায়ক পদ চলে যাবে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সে হিসেবে রাহুলের সংসদ সদস্যের পদ অবিলম্বে খারিজ হওয়ারই ছিল।
জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে আগে বলা ছিল, সংসদ সদস্য-বিধায়ক দোষী সাব্যস্ত হলে তাতে স্থগিতাদেশ পাওয়ার জন্য তিন মাস সময় পাবেন। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার বনাম লিলি টমাস মামলায় আইনের সেই ধারাটি নাকচ করে রায় দিয়েছিলেন, দুই বছরের কারাদণ্ডের সাজার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলেই সংসদ সদস্য পদ চলে যাবে।
পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত লালু প্রসাদের সংসদ সদস্য পদ বাঁচাতে মনমোহন সিংয়ের সরকার অধ্যাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্টে দিয়ে পুরনো ব্যবস্থা বহাল রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাহুল সেই অধ্যাদেশ ছিঁড়ে বাতিল কাগজের ঝুলিতে ফেলে দেওয়ার কথা বলার পর পিছু হটেছিল তৎকালীন ইউপিএ সরকার। এবার সুপ্রিম কোর্টের ২০১৩ সালের সেই নির্দেশের ভিত্তিতেই সংসদ সদস্য পদ খারিজ হলো রাহুল গান্ধীর।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।