প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ০:২২
কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে আসে একটি ‘উদ্বেগজনক’ গোয়েন্দা তথ্য।
তথ্যটি পাওয়া মাত্রই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। মার্কিন প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা সিএনএনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তাদের ভাষ্যমতে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও এই সংকট পর্যবেক্ষণে যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অন্তর্বর্তী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুসি ওয়াইলস।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সেই গোয়েন্দা তথ্যের প্রকৃতি এতটাই স্পর্শকাতর ছিল যে, তা গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করা হয়নি। তবে সূত্রের দাবি, ওই তথ্যের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকেই সক্রিয় হন মার্কিন শীর্ষ নেতারা।
তারা পরস্পরের মধ্যে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত নেন, ভ্যান্সই মোদিকে ফোন করে বিষয়টি জানাবেন এবং আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানাবেন।
সেই অনুযায়ী, গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিষয়টি অবহিত করেন জেডি ভ্যান্স। পরে স্থানীয় সময় দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন তিনি। ফোনে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, হোয়াইট হাউস বিশ্বাস করে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
ভ্যান্স মোদিকে সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান এবং উত্তেজনা কমানোর জন্য বিকল্প রূপরেখা বিবেচনার পরামর্শ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন একটি সমঝোতার খসড়া উপস্থাপন করা হয়, যা পাকিস্তান মেনে নিতে পারে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছিল।
ভ্যান্স-মোদির ফোনালাপের পর রাতভর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা পাকিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সমঝোতার অংশ না হলেও দুই পক্ষকে আলোচনায় বসাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
শেষ পর্যন্ত গতকাল শনিবার বিকেলে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে একমত হয়। এর আগে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং ‘বুনইয়ান-উন-মারসুস’ নামে পাল্টাপাল্টি হামলা চালায় দুই দেশ। এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয় ২২ এপ্রিল, পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর।
কাশ্মীর ইস্যুকে ঘিরে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের এই নতুন উত্তেজনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপেই আপাতত কিছুটা স্থিতি ফিরে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ায়।