নির্বাচন কমিশন (ইসি) গতকাল সোমবার রাতে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। এর ফলে আগামী জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর নির্বাচন কমিশন এই সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেট প্রকাশের পরই ইসি জরুরি বৈঠক ডাকে।
সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, "স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ধারাবাহিকতায় আমরা আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছি।" তবে কোন আইনের অধীনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় আওয়ামী লীগ এখন থেকে দলীয় প্রতীকে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তবে প্রার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল নিবন্ধন পেলেও বর্তমানে ৪৯টি দলের নিবন্ধন সক্রিয় আছে। এর আগে জামায়াতে ইসলামীসহ পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল।
সরকারি গেজেটে আওয়ামী লীগকে সরাসরি নিষিদ্ধ না করলেও দলটির সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গেজেটে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, "নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপনে কোন আইনের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করা উচিত ছিল।" তিনি আরও বলেন, নিবন্ধন স্থগিত হলে কোনো দলের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ছাত্রশিবিরসহ কিছু সংগঠন। তাদের চাপের মুখেই অন্তর্বর্তী সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানা গেছে।
এদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন গতকাল এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, "যখন দেখবেন আকাশে সূর্য উঠে গেছে, তখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।" তাঁর এই মন্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নতুন জল্পনার সৃষ্টি করেছে।