‘স্যাজিটেরিয়াস এ ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। গত দু’বছর ধরে বহু চেষ্টা করে এর ছবি তোলা হয়েছে। যে ছবি প্রকাশ করা হবে এ এপ্রিলেই। এটি মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে রয়েছে। পৃথিবী থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। এর ওজন সূর্যের চেয়ে ৪০ লাখ গুণ! বৃত্তাকার কৃষ্ণগহ্বরের ব্যাসার্ধ ১ কোটি ২০ লাখ কিলোমিটার! এটির ছবি তুলেছে ইভেন্ট হরাইজ্ন টেলিস্কোপ (ইএইচটি), যা বানানো হয় পৃথিবীর ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপের নেটওয়ার্ক দিয়ে। কাজ শুরু করেছিল ২০১৭ সালে।
এ বিষয়ে কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের (আইসিএসপি) অধিকর্তা, দেশের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘ওই ছবির জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। রয়েছি দারুণ উত্তেজনায়। কারণ, একটি বিরলতম ঘটনা ঘটতে চলেছে, যা ব্রহ্মাণ্ডের অনেক জটিলতম রহস্যের জট খুলে দিতে পারে।’ এত দিন ব্ল্যাক হোলের কোনও ছবি পাওয়া সম্ভব হয়নি। সন্দীপ বললেন, ‘গাণিতিক তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৮২ সালেই প্রথম কল্পনায় একটি ছবি আঁকা হয়েছিল ব্ল্যাক হোলের। সেটা এঁকেছিলেন এক শিল্পী। তার নাম জঁ পিয়ের ল্যুমিয়ের। আমার মনে আছে, সেই সময় নোবেল পুরস্কার জয়ী পদার্থবিজ্ঞানী চন্দ্রশেখরের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে দেখি উনি সেই পিয়েরের আঁকা ছবিটাই সামনে টাঙিয়ে রেখেছেন। তারপর আরও অনেক ছবি আঁকা হয়েছে ব্ল্যাক হোলের। কিন্তু সেই সবগুলিই কল্পনাপ্রসূত।’
আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধুই আমাদের গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে থাকা ব্ল্যাক হোলটিরই ছবি তোলেনি ইভেন্ট হরাইজ্ন টেলিস্কোপ, ছবি তুলেছে আরও একটি বিশাল গ্যালাক্সির ঠিক মাঝখানে থাকা আরও একটি ব্ল্যাক হোলে। সেই গ্যালাক্সির নাম- ‘এম-৮৭’, যা পৃথিবীর চেয়ে ৫ কোটি ৩৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরে। দু’টিরই বিরলতম ছবি অনলাইনে প্রকাশ করা হবে এ মাসে।
কীভাবে সেই ছবি তোলা সম্ভব হলো?
সন্দীপ জানাচ্ছেন, প্রচুর আধানযুক্ত কণা ইভেন্ট হরাইজ্নে থাকে বলে ব্ল্যাক হোলের চার পাশের ওই এলাকায় অত্যন্ত শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র বা ম্যাগনেটিক ফিন্ডের জন্ম হয়। সেই শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রগুলোর মধ্য দিয়ে ইভেন্ট হরাইজ্ন থেকে ঠিকরে বেরিয়ে আসে আরও এক ধরনের আলো, যা আসলে রেডিও তরঙ্গ। যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক গুণ বেশি। তা অনেক অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা এক্স-রে পারে না। সেই রেডিও তরঙ্গকে দেখেই ব্ল্যাক হোলের চেহারাটা বুঝতে পারা সম্ভব। পৃথিবীর ৮টি মহাদেশে বসানো অত্যন্ত শক্তিশালী ৮টি রেডিও টেলিস্কোপ দিয়ে সেই রেডিও তরঙ্গকেই দেখা হয়েছে। তার ফলে, এত দিনে ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে ব্ল্যাক হোলের।
তিনি বলেন, ‘নিখুঁত ছবি তোলার জন্য প্রয়োজন অত্যন্ত শক্তিশালী রেজোলিউশনের। আর প্রয়োজন উৎস থেকে বেরিয়ে আসা আলোর কণা ফোটনের পর্যাপ্ত পরিমাণ। যথেষ্ট আলো বেরিয়ে না আসলে তাকে দেখা সম্ভব নয়। কারণ আমরা দেখছি ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূর থেকে! আর একটি ব্ল্যাক হোলকে দেখা হয়েছে ৫ কোটি ৩৫ লাখ আলোকবর্ষ দূর থেকে।’ সন্দীপের কথায়, ‘ব্ল্যাক হোলের পেটে ঢুকে হাপিশ হয়ে যাওয়ার পর নক্ষত্রসহ যাবতীয় মহাজাগতিক বস্তু কোথায় চলে যায়, তা কি ‘ওয়ার্মহোল’-এর মধ্য দিয়ে চলে যায় অন্য আরও কোনও ব্রহ্মাণ্ডে, ভবিষ্যতে তা জানারও পথ খুলে দেবে এ ছবি। পাশাপাশি জানা যাবে, যে আইনস্টাইন এখনও হারেননি ব্রহ্মাণ্ডের নিয়ম-নীতির কাছে, তার সেই সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ কি শেষ পর্যন্ত হার মানে ব্ল্যাক হোলেই, যেখানে স্থান-কাল (স্পেস-টাইম) বলে আর কিছুই থাকে না। তার লয় (বিনাশ) হয় পুরোপুরি।’
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।