প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১৯:৩৬
পাকিস্তান এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের পথে পা রেখেছে। দেশটির সরকার প্রথমবারের মতো কৌশলগত বিটকয়েন রিজার্ভ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, যা বিশ্বে অর্থনীতির ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত 'বিটকয়েন ভেগাস ২০২৫' সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ক্রিপ্টো সহকারী বিলাল বিন সাকিব। আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ পাকিস্তানকে একটি নতুন অর্থনৈতিক অধ্যায়ের দিকে নিয়ে যাবে।
বিলাল বিন সাকিব জানান, পাকিস্তানে বর্তমানে ৪ কোটির বেশি ক্রিপ্টো ওয়ালেট রয়েছে এবং ব্যবহারকারীদের গড় বয়স মাত্র ২৩ বছর। তিনি বলেন, এই বিশাল যুব সমাজ এখন দেশকে অতীত নয়, বরং ভবিষ্যতের আলোকে মূল্যায়ন করতে শেখাচ্ছে। পাকিস্তানের উদীয়মান ফ্রিল্যান্সিং অর্থনীতি ও অনলাইন প্রযুক্তিনির্ভর কর্মসংস্থানের ধারা দেশটিকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে একটি জাতীয় বিটকয়েন ওয়ালেট চালু করা হয়েছে, যা নাগরিকদের ডিজিটাল সম্পদ ব্যবহারে সরাসরি সহায়তা দেবে।
এছাড়াও, ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক তথ্যকেন্দ্র পরিচালনার জন্য ২,০০০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি কোম্পানি, আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন ফার্ম এবং দেশীয় উদ্ভাবকদের পাকিস্তানে বিনিয়োগে উৎসাহিত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে দেশে একটি শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে উঠবে যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উন্নয়নের দুয়ার খুলে দেবে।
এই ঘোষণার পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে গঠন করা হয়েছে পাকিস্তান ডিজিটাল অ্যাসেট অথরিটি বা পিডিএএ। এই সংস্থা প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের অনানুষ্ঠানিক ক্রিপ্টো মার্কেটকে নিয়ন্ত্রণে আনবে এবং একই সঙ্গে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। অর্থ মন্ত্রণালয় গত ২১ মে এই সংস্থার অনুমোদন দিয়েছে এবং শিগগিরই এর কার্যক্রম শুরু হবে। পিডিএএ মূলত ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ, ওয়ালেট, স্টেবলকয়েন, ডেসেন্ট্রালাইজড ফাইন্যান্স অ্যাপ্লিকেশনসহ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো তদারকি করবে।
সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড, বিশেষ করে FATF-এর নির্দেশনা অনুসরণ করবে এবং জাতীয় সম্পদ ও ঋণের টোকেনাইজেশনের মাধ্যমে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে। বিলাল বিন সাকিব বলেন, “পিডিএএ গঠন একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত যা বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে এবং পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল অর্থনীতির অংশে পরিণত করবে।” তার মতে, এটি ভবিষ্যৎমুখী পাকিস্তানের একটি ভিত্তিপ্রস্তর যা আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে।
এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুই সন্তান এরিক ট্রাম্প ও ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। তাদেরকে পাকিস্তান-ভারত আঞ্চলিক উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখার জন্য সম্মাননা দেওয়া হয়, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও ইতিবাচক বার্তা দেয়। পাকিস্তানের এই নতুন ডিজিটাল যাত্রা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইতোমধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং অনেক প্রযুক্তিবিদ ও বিনিয়োগকারী দেশটিতে আগ্রহ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন।
পিডিএএ-এর মাধ্যমে পাকিস্তান যে কেবলমাত্র ক্রিপ্টো বাজারকে নিয়ন্ত্রিত করতে চায় তা নয়, বরং এটি দেশটির নতুন ডিজিটাল পরিচয় গঠনের একটি অংশ। এটি তরুণ উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক ও বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে, যেখানে তারা নতুন ধারণা ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করতে পারবেন। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে পাকিস্তান এখন এক ডিজিটাল বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, যেখানে বিটকয়েন, ব্লকচেইন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দেশটির অগ্রগতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে।