দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) নিয়োগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। পুতুলের নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, তিনি তার মায়ের প্রভাব খাটিয়ে এবং দুর্নীতির মাধ্যমে এই পদ পেয়েছেন। এদিকে, এই ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা একে সংস্থাটির বৈশ্বিক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার এক ধরনের উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’ তাদের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে, পুতুলের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দুদক এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সংস্থাটির উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম ল্যানসেটকে এই তথ্য দেন।
পুতুলের নিয়োগ নিয়ে আলোচনার প্রধান বিষয় হল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মেয়ের পক্ষে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং এভাবে পুতুলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় নিয়োগ নিশ্চিত করেছেন। যদিও শেখ হাসিনা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তবে বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় সরকার পক্ষের কোনো মন্তব্য আসেনি এখনো।
এদিকে, দুদক পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে যেখানে পুতুলের বিরুদ্ধে আর্থিক অসদাচরণ ও রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। দুদক এই চিঠিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে পুতুলকে অপসারণ করার আহ্বান জানিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চাপ প্রয়োগ করতে বলেছে। এর ফলে বাংলাদেশের প্রশাসনিক দিকেও চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য নীতির অগ্রগতি নিশ্চিত করতে কাজ করে, এই ধরনের ঘটনার প্রেক্ষিতে তার বৈশ্বিক ভাবমূর্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হলে তা সংস্থার কার্যক্রম এবং নীতি নির্ধারণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংস্থার প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, এই ধরনের ঘটনা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা এবং স্বচ্ছতা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাদের মতে, যেহেতু স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র, তাই এটি কেবলমাত্র এক দেশের বিষয় নয় বরং সারা বিশ্বের জন্য উদ্বেগজনক।
দুদকের তদন্ত শুরু হওয়া এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের চিঠি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে একটি কঠিন সময় বয়ে আনতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তদন্তের ফলাফল আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের প্রতীকে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, যা সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
পুতুলের নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এর ফলে অন্যদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়বে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত এক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে জনগণের আস্থা না হারায় এবং সংস্থার সুনাম রক্ষা হয়।
অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মেয়ে পুতুলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগের কোনো সঠিক জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা দেশ-বিদেশের সব মহলেই নজর রাখা হবে।
দুদক এই তদন্তের মাধ্যমে পুতুলের নিয়োগের পেছনে যদি দুর্নীতি বা অন্য কোনো অবৈধ কার্যক্রম প্রমাণিত হয়, তবে এটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে একটি বড় ধরনের ঘটনা হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।