শিশু ও কিশোরীদের টিকাগ্রহনসহ জন্মনিবন্ধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইপিআই টিকাদান কার্ড (শিশু এবং কিশোরী/মহিলা)সংকটে বরিশালের টিকাপ্রদান কেন্দ্রগুলো।
ফলে ইপিআই টিকাদান কার্ড এর বদলে সাদা কাগজে স্লিপে লিখে দেয়া হচ্ছে পরবর্তী টিকাদানের তারিখ। এ নিয়ে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে অভিভাবকদের মাঝে, সেইসাথে কার্ড না থাকায় সেবাগ্রহিতাদের বোঝাতেও হিমশিম খাচ্ছেন টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বরতরা।
বরিশাল সদর (জেনারেল) হাসপাতালের ইপিআই টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বরতরা জানান, এ টিকা কেন্দ্রের বরিশাল নগর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অভিভাবকরা শিশুদের টিকা দিতে নিয়ে আসেন। সেক্ষেত্রে মাসে ১৬০-১৭০ টি নতুন কার্ডের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় এর পরিমান দুইশতও ছাড়িয়ে যায়। তবে দেশে মহামারি করোনার সংক্রমন শুরু হওয়ার পর থেকে ইপিআই টিকাদান কার্ড (শিশু এবং কিশোরী/মহিলা)সংকট দেখা দেয়। সর্বোশেষ এ বছর জানুয়ারি মাসে কিছু টিকাকার্ড হাতে পেলেও তা ছিলো চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য।
এ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্সরা জানান, টিকা কার্ড দিতে না পারায় প্রায় সময়ই অভিভাবকরা আমাদের সাথে অশোভন আচরণ করেন। অনেক সময় বাক-বিতান্ডা থেকে চরম আকার ধারণ করে।
অপরদিকে এই কার্ড নিয়ে অভিভাবকদের সাথে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম)হাসপাতালের ইপিআই টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বরতদের সাথেও বাক-বিতান্ডা হয় বলে জানাগেছে। তারা জানান, এ হাসপাতালে মাসে গড়ে ১ শতর মতো নতুন শিশুদের টিকাকার্ড প্রয়োজন হয়, সেইসাথে প্রয়োজন হয় কিশোরীদের টিকাকার্ডও। তবে সম্প্রতি এ কার্ড সরবরাহ করছে না সিভিল সার্জন কার্যালয়। এ বছর যা দিয়েছিলো, তা কোনভাবে গত বছরের টিকা সম্পন্ন হওয়া শিশুদের দেয়া হয়েছে। নতুনদের টিকা দিয়ে সাদা স্লিপে তারিখ লিখে দেয়া হচ্ছে এবং অভিভাবকদের বলে দেয়া হচ্ছে কার্ড এলে তখন তাও দেয়া হবে। তবে কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত সাদা স্লিপটি যেন না হারায় সে নির্দেশনাও দিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তবে অভিভাবকরা বলছেন, জন্মনিবন্ধনের সনদের জন্য এ কার্ডটি থাকা বাধ্যতামূলক। আর কার্ডটি না পেয়ে জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে সবাইকে। এছাড়া ইউরোপসহ বিভিন্ন স্থানে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে শিশু কার্ডটি গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেছেন অনেক অভিভাবক। তাই তারা ইপিআই কেন্দ্র থেকে শিশুদের দেয়া টিকার কার্ড যত দ্রুতসম্ভব সংগ্রহ ও বিতরণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই সুপারেন্টেন্ডেন্ট এনায়েত হোসেন জানান, মহামারি করোনার সংক্রমনের পর থেকে প্রচুর কোভিড-১৯ এর টিকাকার্ড এসেছে। তবে সেইসময় থেকেই ইপিআই টিকাদান কার্ড (শিশু এবং কিশোরী/মহিলা)আসা কমে যায়। পরবর্তীতে এর সংকট দেখা দেয়। মা্ঝে মধ্যে যাও আসছে তাও চাহিদার থেকে কম।
তিনি জানান, সর্বোশেষ গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বরিশাল জেলার ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রগুলোর জন্য শিশু এবং কিশোরী/মহিলা মিলিয়ে আড়াইলাখ কার্ড চাওয়া হয়েছিলো। তবে এখন পর্যন্ত কোন কার্ড পাইনি। আর তিন মাস পর পর চাহিদাপত্র পাঠানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতরে, আশাকরছি দ্রুত কার্ডগুলো পেয়ে যাবো এবং মাঠ পর্যায়ে বিতরনের মধ্যদিয়ে চলমান সমস্যার সমাধান হবে।
এদিকে টিকাকার্ডের এমন সংকট শুধু বরিশাল জেলাতেই নয়, গোটা বিভাগের ৬ জেলাতেই রয়েছে।
তবে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ডাঃ শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, কার্ডের চাহিদার বিষয়টি স্ব-স্ব জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় দেখভাল করে। তারপরও যাতে দ্রুত কার্ড সংগ্রহ করা যায় এবং এর চাহিদা স্বাভাবিক রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর উদ্যোগ নিবো। আশাকরি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।