গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যে খবরও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা দেখে আশ্চর্য হিসাবে আমাকে মর্মাহত করে। আজকাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় দেখা যাচ্ছে, শিক্ষকগণ প্রশাসনের বিভিন্ন পদ পদবী পাওয়ার লোভে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ঠিকমতো অংশ না নিয়ে বিভিন্ন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, অনেকে আবার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতেও পিছপা হন না ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভুলে গিয়ে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট লেনদেনের সম্পৃক্ত হোন। এটা অত্যন্ত অসম্মানের অমর্যাদাকর। মনে রাখবেন আপনারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। সাধারণ মানুষ আপনাদেরকে সম্মান ও মর্যাদার উচ্চাসনে দেখতে চায়। তাই ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য নীতি ও আদর্শের সাথে আপোষ করবেন না। আপনাদের মর্যাদা আপনাদেরকে সমুন্নত রাখতে হবে। ব্যক্তি স্বার্থের কাছে আদর্শ যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয় সে দায়িত্ব আপনাদেরকে নিতে হবে। আপনার রাজনীতি ভাবিও খুবই সচেতন ব্যক্তিত্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ ও চিন্তা-চেতনার একজন আরেকজনের পার্থক্য থাকতেই পারে কিন্তু এর নেতিবাচক প্রভাব যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপর না পরে তাও নিশ্চিত করতে হবে।
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, এক বিংশ শতাব্দীর তথ্য প্রযুক্তির যুগ বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আধুনিক ও প্রযুক্তির জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। বাংলাদেশের বিশাল তরুণসমাজকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করার জন্য আনুপাতিক হারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। এই বিবেচনায় বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ তৈরি হয়েছে তাতে দেশের সকল অ লের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে উদ্যোগ ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস করি।
গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমরা গ্রাজুয়েট দেশের উচ্চতার মানবসম্পদ দেশের ভবিষ্যত উন্নয়ন ও অগ্রগতি নির্ভর করছে তোমাদের ওপর। তোমাদের তারুণ্য জ্ঞান মেধা ও প্রজ্ঞা হবে দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সব সময় সত্য অন্যায়কে সমুন্নত রাখবে নৈতিকতা দিয়ে দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। রাষ্ট্রের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে তোমাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা তোমরা কখনো অর্জিত ডিগ্রির মর্যাদা ব্যক্তিগত সম্মানবোধ আর নৈতিকতাকে ভূলুন্ঠিত করবে না বিবেকের কাছে কখনো পরাজিত হবে না। মনে রাখবে এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে তোমাদের শিক্ষার ব্যয় ভার বহন করছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী এখন সময় এসেছে সেই ঋণ পরিশোধ করার তোমরা তোমাদের মেধা কর্ম ও সততা দিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণ করতে পারলে এই ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।
কর্ম উপলক্ষে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন ভুলবে না শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মন্ডলী সহপাঠীসহ এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ভুলবে না এদেশ এদেশের সাধারণ জনগণকে মনে রাখবে। বাঙালিরে সাধারণ জনগণের মধ্যেই প্রকৃত জাতির পিতা বলেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের চাইতে দেশ গড়ার সংগ্রাম বেশি কঠিন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মলয় কুমার ভৌমিকের সঞ্চলনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তী।
এছাড়া বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান, স্বাগত বক্তব্য দেন রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. চৌধুরি জাকারিয়া, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অধ্যাপক এম এ বারী।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।