ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবর রহমানকে শিবির তকমা দিয়ে বিদ্রোহী ছাত্রলীগ কুশপুত্তলিকা দাহ করায় প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে শিক্ষক সমাজ। বুধবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন উর রশিদ আসকারীর কাছে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এর সুষ্ঠু বিচারের দাবী করেন প্রগতিশীল শিক্ষকবৃন্দ।
জানা যায়, অধ্যাপক মাহবুব বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবনেও শিবিরের সাথে তার কোন সম্পর্ক ছিলোনা। তবুও একদল স্বার্থংনাশী, মাদকাসক্ত, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে অধ্যাপক ড. মাহবুবরকে বারবার শিবির তকমা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। সর্বশেষ গতকাল মিছিল ও তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করে ছাত্রলীগের ওই গ্রুপটি। অভিযোগ উঠেছে কিছু অনুপ্রবেশ কারী শিবির এবং স্থানীয় ছাত্র জোর পূর্বক ক্যাম্পাসে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের নানা সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশকে বিনষ্ট করে যাচ্ছে। এমনকি শুধু অধ্যাপক ড. মাহবুব নয়, বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীরাও তাদের এ লাঞ্ছনার হাত থেকে রেহাই পাননি। অধ্যাপক ড. মাহবুবের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ ছাত্র জীবনে তিনি শিবির মতাদর্শী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদপত্র পাঠক ফোরামের সদস্য ছিলেন। তিনি শিবির করতেন।
এদিকে তাকে শিবির তকমা দেয়ায় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করেছে। বিষটি নিয়ে প্রগতিশীল শিক্ষকবৃন্দ বুধবার সকালে উপাচার্য কার্যালয়ে উপাচার্য ড. রাশিদ আসকারীর কাছে শিক্ষক সমাজের চর অপমানের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনকারীদের বিচার দাবি করেন।
এ সময় বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুধাংশু কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদপত্র পাঠক ফোরামের সদস্য ছিলাম সেজন্য আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি, যেখানে অধ্যাপক ড. আব্দুল খালেক স্যারের মত মানুষ প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন সেখানে এই অরাজনৈতিক সংগঠনকে শিবিরের সংগঠন বলা খুবই দুঃখজনক। এখানে থেকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আমি নিজেকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রক্টর থাকাকালীন সময়ে ২০১৭ সালের ১৪ আগষ্ট অধ্যাপক ড. মাহবুবরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় শিবিরের দূর্গ খ্যাত ইবির হলগুলো থেকে শিবির মুক্ত করেছিলেন। একই সাথে বিনা রক্তপাতে হলসমূহ শিবিরমুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হন। এ ছাড়াও তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু হলে প্রভোস্টের দায়িত্ব নেয়ার পরে ২০০৯ সালে বিভিন্ন মহলের প্রবল বাধার মুখে, ইসলামী ছাত্রশিবির লেখা মুছে হল গেট সম্মুখে “বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল এবং বাংলাদেশের ম্যাপ” স্থাপন করেছিলেন তিনি।
পাঠক ফোরাম শিবিরের কিনা? এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, পাঠক ফোরাম কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়, এটা সামাজিক সংগঠনের মধ্যে পড়ে। ড. মাহবুবর রহমানকে আমি আগে থেকে চিনি, তিনি কখনো শিবির করতেন না। কেউ যদি এটা বলে থাকে তবে তারা অন্যায় করছে। তিনি কখনো জামাত-শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না বরং তিনি আমাদের সাথে মিশতেন।
বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল বলেন, আমি অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবর রহমানকে চিনি। আমি সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক ফোরামের সদস্য ছিলাম এবং অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবর রহমানও এ ফোরামের সদস্য ছিলেন। সে সময় পাঠক ফোরামের সাথে শিবিরের কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলো না তবে পরবর্তীতে সংগঠনটি শিবির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন ‘পাঠক ফোরাম’ একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই প্রতিষ্ঠানের সাথে কোনো দলের সম্পর্ক নেই। এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এখানে প্রগতিশীল শিক্ষক, বিভিন্ন দলের শিক্ষক বিভিন্ন সময় উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। এখানে উপাচার্য প্রধান পৃষ্ঠপোষক।এটা লার্নারদের একটি প্লাটফর্ম। এখানে সব ধরনের ছাত্রই অংশগ্রহন করে থাকে। সংগঠনটি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করে যেখানে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর এসে থাকেন। এর আগে UGC এর চেয়ারম্যান, জাফর ইকবাল, সুলতানা কামালের মত ব্যাক্তিবর্গও সংগঠনটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।
এ ব্যাপারে আন্দোলনকারী ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, তিনি শিবির করতেন এমন কিছু আমার জানা নেই, একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের নিউজের ভিত্তিতে আমরা এ আন্দোলন করেছি। এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, শিবিরের দূর্গ ছিন্ন করে ইবিকে শিবির মুক্ত করাতে যারা আঘাত পেয়েছিল, আজ তারা ধুম্রজাল সৃষ্টি করে প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করছে, যা অসম্ভব। সততা ও আদর্শ হতে আমাকে এক চুল নড়াতে পারবে না।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, বিষয়টি পত্রিকায় দেখেছি, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে পরে আলোচনা করে দেখবো। শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে কোনো পদক্ষেপ নিবেন কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, একজনের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা নিন্দা করা অনাকাঙ্ক্ষিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকবৃন্দ আমার কাছে এসেছিলেন তারা এর বিচার দাবি করেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।