রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে মারধর ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে মতিহার থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। শনিবার রাতে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান। তবে মামলার এজাহারে থাকা তিনজনের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি দুজন পলাতক রয়েছে। হত্যাচেষ্টার মামলায় পলাতক দুজন হলেন- আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবীর নাহিদ। এছাড়া আরো তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- আকিমূল ইসলাম রিফাত (ইসলামিক স্টাডিজ ৪র্থ বর্ষ)। সে এজাহারভুক্ত মামলার আসামী। আর বাকি তিনজন হলেন- সুজন (২য় বর্ষ ইসলামিক স্টাডিজ), আসিফ (লোক প্রশাসন ২য় বর্ষ) ও হাসানুজ্জামান (৪র্থ বর্ষ ইসলামি স্টাডিজ)। এদিকে, এই ঘটনায় হল প্রশাসন ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হল প্রসাশনকে ৪৮ ঘন্টা ও ছাত্রলীগকে ২৪ ঘন্টা মধ্যে এই প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। হল প্রসাশনের পক্ষ থেকে ওমর ফারুককে কমিটির আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন- ফজলুল হক, ফিরোজ আহমেদ, ও শফিকুল ইসলাম। তারা হলের সবাই শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষক।
তদন্ত কমিটির বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ ড. জুলকার নায়েন বলেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। মারধরের শিকার শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করবে হল প্রশাসন। এছাড়া অভিযুক্ত দুইজনের আবাসিকা বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি। আর যাকে মারধর করা সে অসুস্থ থাকায় ৪৮ ঘন্টা সময় নেওয়া হয়েছে। যাতে তদন্ত সুষ্ঠুভাবে করা যায়।
অন্যদিকে, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। তারা হলেন- সহ-সভাপতি মাহফুজ আল আমিন, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত, যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক মো. সাব্বির হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম সোহরাব হোসেন। সে ফাইন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং শহীদ শামসোজ্জাহ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। মারধরকারীরা হলেন- আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবীর নাহিদ। তারা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী। এই ঘটনার পর থেকে তারা দুজনই পলাতক রয়েছে।
এর আগে শুক্রবার শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হলে ছাত্রলীগ কর্মী আসিফ লাক ও হুমায়ুন কবীর নাহিদের নেতৃতে বেশ কয়েজন সোহরাবকে ল্যাপটপ চুরির অভিযোগে হলের তৃতীয় ব্লকের ২৫৪ নাম্বার কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন আসিফ লাক ও হুমায়ন কবির নাহিদ। একপর্যায়ে তারা দুইজন মিলে সোহরাবকে রড দিয়ে উপর্যুপুরি আঘাত করে। সোহরাব রক্তাক্ত হলে তারা মারধর বন্ধ করেন। পরে সোহরাবের বন্ধুরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে ও পরে রামেকে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় তার মাথায় ৯টি সেলাই দেওয়া ও তার বাম হাতের কোনোই ভেঙ্গে গেছে বলে দাবি করেন তার বন্ধুরা।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। চার ঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন। এ সময় তারা তিনটি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে নাহিদ ও আসিফসহ যারা হত্যা চেষ্টায় জড়িত ছিল তাদের গ্রেপ্তার ও স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার, হল প্রশাসন নিরাপত্তা প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সোহরাবের চিকিৎসা ব্যয় বহনের দায়িত্ব নেওয়া।
বিকাল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। সেখানে ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, আজ রাতের মধ্যেই দোষীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। সোহরাবের ব্যয়ভার প্রশাসন বহন করবে বলেও জানান এই শিক্ষক।
সোহরাবের বন্ধু তনয় জানান, সোহরাবের বাম হাতের কনুইয়ের ওপর ও নিচে দুই জায়গায় ভেঙে গেছে। চিকিৎসক জানিয়েছে মাথার তিন জায়গায় মোট ৯ টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার পায়েও গুরুতর যখম হয়েছে। এক্সরে করা হচ্ছে রিপোর্ট পেলে জানা যাবে পা ভেঙ্গেছে কিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। দোষ প্রমাণ হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। তবে ঘটনাটি জানার পর আমি সহকারী প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। সোহরাবের বন্ধু জুবায়েরের সঙ্গেও কথা হয়েছে। সে সোহরাবের সাথেই আছে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।