অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বরিশালে বিআরটিসির চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক
এইচ.এম.এ রাতুল, জেলা প্রতিনিধি, বরিশাল।
প্রকাশিত: শনিবার ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:০৬ অপরাহ্ন
অনিয়ম খতিয়ে দেখতে বরিশালে বিআরটিসির চেয়ারম্যান

বরিশাল বিআরটিসির দূর্নীতি ও নানা অনিয়মের ব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শনে এসেছেন দপ্তরটির চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব তাজুল ইসলাম। দুই দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) তিনি সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় সভা করেন। 


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিআরটিসি বাস ডিপোর সদ্য বিদায়ী ম্যানেজার মনিরুজ্জামান বাবুসহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। যার প্রেক্ষিতে দপ্তরটির প্রধান কার্যালয় একটি তদন্ত টিমও গঠন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিআরটিসির চেয়ারম্যান বরিশাল বাস ডিপো পরিদর্শনে আসেন। 


সফরের দ্বিতীয় দিনে শনিবার বরিশাল বিআরটিসি বাস ডিপো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি জানান মাত্র কয়েকমাস আগে এই দায়িত্বে (চেয়ারম্যান) যোগদান করেছেন। বিভিন্ন সময় নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছেন তারা। সবগুলো অভিযোগই খতিয়ে দেখা হবে। দোষী প্রমানিত সবার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থার কথাও জানান তিনি। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন প্রধান কার্যালয়ের জিএম (ফাইনান্স) মোঃ আমজাদ হোসেন ও বরিশাল বাস ডিপোর ইনচার্য জাহাঙ্গীর আলম।



উল্লেখ্য, নকল ওয়েবিল তৈরী করে বিআরটিসির বরিশাল বাস ডিপোর সদ্য বিদায়ী কর্মকর্তা (ডিজিএম) মনিরুজ্জামান বাবুর বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে লুটপাটের জন্য তৈরী করেছিলেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। নিজের স্বার্থবিরোধী হওয়ায় বদলি করিয়েছেন প্রায় অর্ধশত চালক ও কর্মচারীকে। আবার তার সহযোগী হওয়ায় একই কর্মস্থলে ১০ থেকে ২০ বছর চাকুরী করলেও তাদের রেখেছেন বহাল তবিয়তে। তার এ অনিয়ম, দূর্ণীতি ও সেচ্ছাচারিতার বিষয়ে দুদক ও বিআরটিসি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছেন কয়েক ভুক্তভুগি। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির ধারাবাহিক এই দূর্নীতির বিরুদ্ধে গত বছর এক যাত্রী আদালতে মামলা পর্যন্তও করেছেন। 


বরিশাল বিআরটিসির অভিযুক্ত ম্যানেজার জামিল হোসেন বদলি হলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওই পদের দায়িত্ব পান ডিজিএম মনিরুজ্জামান বাবু। লিজের মাধ্যমে বিআরটিসির গাড়ি চললেও বরিশাল-কাওরাকান্দি রুটের প্রতিটি বাসের জন্য তৈরী করা হয় দুটি ওয়েবিল। বরিশাল থেকে কাওরাকান্দি আসা যাওয়ার এক ট্রিপে ২৬ থেকে ২৯ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হলেও ম্যানেজার মনিরুজ্জামান আরেকটি নকল ওয়েবিল তৈরী করে তাতে গাড়ির চালকের স্বাক্ষর নিয়ে এর মধ্য থেকে মাত্র ১৪ হাজার টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিতেন। 


এভাবে শুধুমাত্র এই একটি রুট থেকেই প্রতিদিন ১৩ থেকে ১৫ টি গাড়ির নকল ওয়েবিলের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আত্মসাত করা হয় দেড় লাখ টাকার উপরে। সরকারের রাজস্ব বাঁচাতে এসব অনিয়মের প্রমানপত্র দিয়ে বেশ কয়েক ব্যাক্তি বিআরটিসির চেয়ারম্যান ও দুদক প্রধান কার্যালয় সহ কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। সরকারী দপ্তরে দেয়া অভিযোগে বলা হয় গতবছর সেপ্টেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ম্যানেজার মনিরুজ্জামান বাবু নকল ওয়েবিল তৈরী করে সরকারের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। 


সম্প্রতি তাকেও বরিশাল থেকে বদলী করা হয়। তবে এতে কোন অনিয়মের পরিবর্তন হয়নি বলে জানান সাধারন কর্মচারীরা। তার দেখানো পথেই চলছে বরিশাল বিআরটিসি। এসব নানা অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই বরিশালে আসেন চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।