প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১১:২৮
জিলহজ মাস হিজরি বছরের অন্যতম পবিত্র মাস এবং এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি স্তম্ভের একটি—হজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এ মাসের প্রথম দশ দিনকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ বলা হয়েছে। এই সময়টিকে নবী কারিম (সা.) বছরের সেরা দিনসমূহ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যেখানে সৎকর্মের প্রতিদান অন্যান্য সময়ের চেয়ে বহুগুণ বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘‘জিলহজ মাসের প্রথম দশদিনে আল্লাহর কাছে নেক আমল যত প্রিয়, অন্য কোনো সময় তা ততটা প্রিয় নয়’’—(বুখারি)। এই মাসে তওবা, ইবাদত, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া অধিক হারে করার তাগিদ রয়েছে। বিশেষ করে এই দশ দিনে রোজা রাখা, যিকির-আসকার ও নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।
এই মাসের ৯ তারিখ অর্থাৎ ‘আরাফাহ দিবস’ অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। যারা হজ করছেন না, তারা যদি এ দিনে রোজা রাখেন তবে তা দুই বছরের গুনাহ মাফের কারণ হয়—একটি আগের বছরের ও একটি পরবর্তী বছরের (মুসলিম)। রাসুল (সা.) নিজে আরাফাহ রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের তা রাখতে উৎসাহিত করতেন। এটি রোজার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভের সুবর্ণ সুযোগ। জিলহজ মাসের আরেকটি তাৎপর্য হলো কোরবানি, যা ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়। এটি ইবরাহিম (আ.)-এর আল্লাহর পথে আত্মত্যাগের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয়।
কোরবানি করা ইসলামী শারঈ বিধান। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য এটি ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, “আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন ও কোরবানি করুন” (সূরা কাওসার, আয়াত ২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বয়ং কোরবানি করতেন এবং সাহাবিদের তা করতে উৎসাহিত করতেন। এ মাসে কোরবানি ছাড়াও দান-সদকা, গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়ানো, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ নেওয়া, এবং ঈদের খুশি ভাগাভাগি করার শিক্ষা রয়েছে।
জিলহজ মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো হজ পালন। হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ এবং শুধুমাত্র আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম মুসলমানদের জন্য ফরজ। হজ পালনের মাধ্যমে মানুষ তার জীবনের যাবতীয় গোনাহ থেকে মুক্তি লাভ করে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি হজ করল এবং অশ্লীল কথা ও গোনাহ থেকে দূরে থাকল, সে সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে’’—(বুখারি, মুসলিম)। যদিও বর্তমানে অনেকেই হজে যেতে পারেন না, তবে জিলহজ মাসে হজের শিক্ষা ও ভাবধারায় চলা উচিত।
জিলহজ মাসে বেশি বেশি করে ‘তাকবিরে তাশরিক’ পাঠ করার নির্দেশ রয়েছে। ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসরের পর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তাকবির বলা সুন্নত। এটি হলো—“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ।” এ ধরণের যিকিরে মুখর রাখলে হৃদয় হয় প্রশান্ত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়। অনেক ইসলামিক স্কলার এ সময়ে গুনাহ থেকে বাঁচা এবং আত্মশুদ্ধির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেন।
এই মাসে আত্মশুদ্ধি ও তওবার আমলগুলো খুবই কার্যকর। রাসুল (সা.) জিলহজ মাসে অধিক দোয়া করতেন। বিশেষ করে আরাফার দিনের দোয়াকে ‘সেরা দোয়া’ বলেছেন। এ সময় আপনি নিজের জন্য, পরিবার, দেশ ও গোটা উম্মতের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে পারেন। গোনাহের বোঝা হালকা করতে তওবা ও ইস্তিগফার করা উত্তম কাজ। অতএব, এ মাসটিকে নেক আমল, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস হিসেবে কাজে লাগানো আমাদের কর্তব্য।
জিলহজ মাসে সময়ের সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। নামাজ-রোজা, দান-সদকা, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা, এবং সৎ পথে চলা—এসবই ইসলামি জীবনচর্চার অংশ। এ মাসে আমল যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করাও অপরিহার্য। এই সুযোগে যে যত বেশি আমল করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে তত বেশি পুরস্কৃত করবেন—এ বিশ্বাস নিয়ে আমরা জিলহজ মাসকে কাজে লাগাতে পারি।
ছবির পরামর্শ:
অন্য কিছু জানতে চাইলে জানাবেন।