বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধাক্কা দিল প্রতিবেশী দেশ ভারত। ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের মতো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির অন্যতম মাধ্যম ছিল ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা। সেই সুবিধা হঠাৎ করে বাতিল করেছে ভারত সরকার। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা।
এ বিষয়ে আগামীকাল জরুরি বৈঠকে বসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত অশনি সংকেত। বৈঠকে এই সংকট মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের ফলে বাংলাদেশ থেকে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে পণ্য পাঠানো কঠিন হয়ে পড়বে। এতদিন ভারত তার ভূমি ও স্থলপথ ব্যবহার করতে দিয়ে বাংলাদেশকে এই সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই পথ বন্ধ হওয়ায় বিকল্প কোন উপায় আপাতত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের স্থলপথ ছাড়া ওইসব দেশে পণ্য পাঠাতে খরচ ও সময় দুই-ই বহুগুণ বেড়ে যাবে। পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দর, বিশেষ করে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করেও বাংলাদেশি তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য পাঠানো হতো। সেটাও এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারকরা। বিশেষ করে ড্যানিশ ফুডের হেড অব বিজনেস দেবাশীষ সিংহ জানিয়েছেন, এখন ভুটান, নেপাল কিংবা মিয়ানমারে খাদ্যপণ্য পাঠানো কার্যত বন্ধ হয়ে গেল। কারণ ওইসব দেশে পৌঁছানোর আর কোনো সরাসরি বিকল্প পথ নেই।
ভারতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। ভারতের পত্রিকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তারে বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। সেই কারণে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে দিল্লি।
এ নিয়ে রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, বাংলাদেশকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-তে অভিযোগ জানানো উচিত। তারা মনে করেন, এমন হঠাৎ সিদ্ধান্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিপন্থী।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৈঠকের পর ভারতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হতে পারে। একই সঙ্গে বিকল্প কোনো রুট খোঁজা কিংবা কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে উদ্যোগ নেওয়া হবে।