চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের কাঁটাখালী গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো বহু বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও গ্রামীণ মেলা। সোমবার বিকালে প্রেমচরণ ফকিরের বাড়ির পাশের মাঠজুড়ে এই আয়োজন চলে দিনব্যাপী। স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ ভিড় করেন এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে।
এই চড়ক পূজার মূল আকর্ষণ হলো পিঠে বড়শি গেঁথে চরকিতে ঘোরানো। এই উৎসব চৈত্র মাসের শেষ দিনে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বিকেলের দিকে মূল পূজা শুরু হলে ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যায়। পূজার আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি কালী, শীতলা ও বুড়ি দেবীর পূজাও অনুষ্ঠিত হয়।
এবার চড়কিতে যাদের পিঠে বড়শি গেঁথে ঘোরানো হয়, তারা হলেন জয় বিশ্বাস (২২) ও দেবদাস বিশ্বাস (২৪)। বহু লোক এই দৃশ্য দেখতে ভিড় করে, অনেকের চোখে বিস্ময় আর আবেগের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। আচার অনুযায়ী তারা আগেই উপবাস থেকে এই পবিত্র রীতির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেন।
মেলায় আগত দর্শনার্থী জয়দেব শংকর বলেন, আমি প্রতি বছরই এই মেলাতে আসি। শরীরে বড়শি বিধিয়ে চরকিতে ঘোরানোর দৃশ্যটা শুনলেই গা শিউরে ওঠে। তবে এই দৃশ্য নিজের চোখে দেখা এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। তিনি জানান, তার এলাকার মেলাগুলোতে এমন ব্যতিক্রমধর্মী আচার দেখা যায় না।
কামনা বিশ্বাস জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছেন এই ঐতিহ্যবাহী মেলা দেখতে। তার মতে, এই মেলার পরিবেশ বরাবরের মতো প্রাণবন্ত এবং এবারও বিভিন্ন দোকানে প্রচুর কেনাকাটা করতে দেখা গেছে মানুষকে। অনেকেই শুধু এই বড়শি ঘোরানোর দৃশ্য দেখার জন্যই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন।
সুজিত কুমার দাস বলেন, ছোটবেলা থেকেই এই পূজা দেখছি। প্রতি বছর পরিবারের সবাইকে নিয়ে এখানে আসি। এটা শুধু পূজা নয়, একটি সংস্কৃতি, যা হাজারো মানুষকে একত্র করে। তিনি জানান, ভগবানের কাছে সবার মঙ্গল কামনাই এই পূজার মূল বার্তা।
মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি বাদল বিশ্বাস বলেন, বড়শি বিধিয়ে যেসব ভক্ত চড়কে অংশ নেন, তারা পূজার আগে এক সপ্তাহ উপবাস করেন। এই মেলা রাজবাড়ী জেলার অন্যতম পুরাতন উৎসব এবং প্রতি বছর হাজারো দর্শনার্থীর আগমনে ভরে ওঠে এই এলাকাটি।
তিনি আরও বলেন, কাঁটাখালীর এই মেলা শুধু চড়ক পূজার জন্য নয়, বরং এটি একটি মিলনমেলাও। উৎসবে আগতরা শুধু আচার-অনুষ্ঠান নয়, বরং আনন্দ, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় আবেগ নিয়ে ফিরে যান নিজেদের ঘরে। এই উৎসব বাঙালির লোকজ সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন হয়ে রয়ে গেছে।